নামাজের ওয়াজিব কয়টি | নামাজের মধ্যে ১৪টি কাজ ওয়াজিব

আমরা এর আগের আর্টিকেল গুলোতে আলোচনা করেছি নামাজ পড়ার নিয়ম কি ও নামাযের সময় সঠিক নিয়মে ইকামত কিভাবে দিতে হয় ইত্যাদি সম্পর্কে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে যে কতোগুলো কাজ ফরজ ও ওয়াজিব আছে তা কি জানেন? আজ আপনার নামাজের ওয়াজিব কয়টি এবং কয়টি কাজ ফরজ ও কয়টি নফল তা জানতে পারবেন। 

নামাজের ওয়াজিব কয়টি

কারন,কোন একটি ফরজ বা ওয়াজিব যদি ভুলে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেরে দেয় তার নামাজ হবে না, তাকে নামাজের ওয়াজিব মেনে আবার নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজের ওয়াজিব কয়টি সে বিষয়ে আপনার ধারনা না থাকলে আপনি একজন নামাজি হতে সহ্মম হবেন না। আমাদের আজকের এই আর্টিকেল সম্পুর্ণ পড়লে আপনি আর নামাজ আদায়ে কোন ভুল করবেন না।

সূচিপত্রঃ নামাজের ওয়াজিব কয়টি | নামাজের যে ১৪টি ওয়াজিব পালন করতে হবে

নামাজের ওয়াজিব কি? 

ওয়াজিব অর্থ হচ্ছে করতব্য,এবং নামাজের ওয়াজিব মানে হচ্ছে নামাজ আদায়ের জন্য আমাদের যে কাজগুলো করতে হয় বা নামাজ আদায়ের কর্তব্য। আমাদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ওয়াজিব নামাজের জন্য ১৪টি ওয়াজিব কাজ ও ৬টি ফরজ কাজ রয়েছে যা আমাদের করতে হবে। 

তার মধ্যে পাঁচটি রুকনি ওয়াজিব কাজ। রুকন বলতে মূলত একটি স্তম্ভকে বোঝায়, যেখানে কেউ যদি তাদের থেকে বাদ পড়ে, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে না করে বা ভুল করে তবে তাদের নামাজ বাতিল হয়ে যাবে।  

নামাজের ওয়াজিব কয়টি? নামাজের যে ১৪টি ওয়াজিব

নামাজের ওয়াজিব ১৪টি যা আপনাদেরকে আগেই জানানো হয়েছে। এখন আমরা নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি তা বর্ণ্না করবো। নামাজের ওয়াজিব জেনে রাখা আমাদের সকলের জন্য আরো একটি ওয়াজিব কাজ,আসুন নিচের নামজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি জেনে নিন-   

১। সুরা ফাতিহাঃ নামাজের ফরজ কাজ গুলো অর্থাৎ নিয়ত ও তাহরীমা পাঠ করার পর সূরা ফাতিহা পাঠ করা নামাজের প্রথম ওয়াজিব কাজ। 

২। সুরা মিলানোঃ সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর অবশ্যই কুরআন হতে কোন একটি সুরা বা সূরার তিনটি আয়াত পাঠ করতে হবে।

৩। নামাজের প্রতেক ফরজ কাজ গুলো নিজ নিজ স্থানে আদায় করাও ওয়াজিব।

৪। রুকু করাঃ  এখন প্রতিটি রাকাতের জন্য আপনার একটি রুকূ করতে হবে।

৫। সিজদাঃ  প্রতিটি এক রাকাতের জন্য আপনার দুটি ওয়াজিব সেজদা রয়েছে।

৬। রুকু সেজদায় দেরী করা। 

৭। সেজদার মধ্যে উভয় হাত এবং হাঁটু মাটিতে রাখা।

৮। দুই রাকাতে শেষ করে বসা যাকে মজলিস বলে।

৯। রুকু করে হতে উঠে সোজা হয়ে দারানো এবং সেজদা হতেমাথা তুলে সোজা হয়ে বসা।

১০। তাশাহুদ পাঠঃ প্রথম বৈঠক ও শেষ বৈঠক দুটাতেই আত্যাহিয়াতু অর্থাৎ তাশাহুদ পাঠ করতে হবে।

১১। বেতের নামাজে দোয়া কুনুত পাঠ করা ওয়জিব।

১২। জেহরী নামাজে প্রথম দু রাকাতের মধ্যে ইমামের জোরে কেরআত পড়া এবং ছিররী নামাজের মধ্যে ইমাম এবং একা নামাজে শব্দ ছাড়া পড়া। 

১৩। সালাম ফিরানোঃ আসসালামু আলাইকুম বলে প্রথমে ডান দিকে ও পড়ে বাম দিকে ফিরে সালাম দেওয়া।

১৪। দুই ইদের নামজে ছয় ছয় তাকবির বলা ওয়াজিব। 

নামাজের ফরজ কয়টি ?

নামাজের ফরজ মোট ৬ টি নিম্মে নামাজের ফরজ গুলো উল্লেখ করা হলো- 
  • ১। তাহরীমাঃ নামাজের নিয়তের সাথে সাথে "আল্লাহু আকবর" বলা।
  • ২। কেয়ামঃ দারিয়ে নামাজ আদায় করা।
  • ৩। কেরআতঃ কোরআন হতে একটি সুরা বা কোন সুরার তিন আয়াত পাঠ করা। 
  • ৪। রুকু করা। 
  • ৫। সেজদা করাঃ দুবার আল্লাহর সামনে মাথা মাটিতে রাখা। 
  • ৬। কাদায়ে আখেরীঃ নামাজের শেষ ভাগে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পরিনাণ সময় বসা। 

বেতের নামাজের ওয়াজিব কয়টি?

বেতের নামাজের ওয়াজিব সকল নামাজের মতোই কিন্তু, বেতের নামাজের ওয়াজিব যা খুব গুরুতবপূর্ন তা হচ্ছে দোয়া কুনুত পাঠ করা। এবং দোয়া কুনুত পাঠ করার আগে কেরআত শেষ করে পুনরায় তাহরীমা বলে হাত বাধা। এর পর রুকু,সেজদা করে শেষ বৈঠকে বসে সালাম ফিরিয়ে নামজ শেষ করাই হচ্ছে বেতের নামাজের ওয়াজিব।     

জুম্মার নামাজের ওয়াজিব কয়টি?

জুম্মার নামাজের ওয়াজিব অন্যন্য নামাজের যে ১৪টি ওয়াজিব পালন করতে হবে তার ব্যতক্রম নয়। কিন্তু জুম্মার দিনের জন্য কিছু ওয়াজিব কাজ রয়েছে তা হলো-
  • জুমার দিনে ইমাম যখন খুতবা দিচ্ছেন তখন কথা বলা নিষিদ্ধ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তি দ্বারা এর প্রমাণ পাওয়া যায়: “যখন আপনি জুমআর দিনে আপনার সঙ্গীকে বলেন “চুপ হয়ে যাও” যখন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তখন আপনি সত্যই একটি অর্থহীন বক্তব্য উচ্চারণ করেছেন”। (সূত্র: আল-বুখারি)]
  • উপবিষ্ট লোকদের মধ্যে হাঁটা নিরুৎসাহিত করা হয়, যদি ব্যক্তি ইমাম হয় বা সে এমন একটি খালি স্থান পূরণের জন্য হেঁটে যায় যেখানে সে তাদের মধ্যে হাঁটা ছাড়া যেতে পারে না।

ইদের নামাজের ওয়াজিব কয়টি?

শাওয়াল মাসের চাঁদের প্রথম একটি ইদ ও যিলহজ মাসের চাঁদের ১০ তারিখে আরেকটি ইদ পালন করা হয়। ইদের দিনে সকল মুসলমানদের একত্রিত হয়ে শোকর আদায়ের জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। দুই ইদের নামজে ছয় ছয় তাকবির বলা ওয়াজিব। 

তাছারা,জুম্মার নামজের জন্য সে সব শর্ত, ঠিক ইদের নামাজের ওয়াজিব এর জন্যও ঐ একই শর্ত প্রজয্য। জুম্মার খুৎবার ন্যায় ইদের খুৎবা শুনাও ওয়াজিব। 

জানাজার নামাজের ওয়াজিব কয়টি?

জানাজার নামাজের জন্য ২টি কাজ ওয়াজিব; ৪ বার তাকবীর "আল্লাহু আকবার" বলা (যেমন ৪ তাকবীর ৪ রামাত) ও দারিয়ে নামাজ পড়া। জানাজার নামাজের হ্মেত্রে নামাজের যে ১৪টি ওয়াজিব পালন করতে হয় না। জানাজার নামাজে রুকু করা, সেজদা করা (দুবার আল্লাহর সামনে মাথা মাটিতে রাখা), কাদায়ে আখেরী মতো ওয়াজিব কাজ নেয়। 

নামাজের ওয়াজিব ভুলে গেলে কি করব? 

নামাজের ওয়াজিব ভুলে গেলে কি করব? এইটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি করা একটি প্রশ্ন,যার উত্তর আপনারা এখন পাবেন। বিভিন্ন হাদিসে নামাজের নামাজের ওয়াজিব ভুলে গেলে কি করতে হবে তা বর্ণ্না করা হয়েছে।


নামাজের ওয়াজিব ভুলে গেলে সাহু সেজদা করতে হয়,যাকে দু সেজদাও বলা হয়। শেষ বৈঠকে তাশাহুদ,দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করার ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে আবার দুইটা সেজদা করে আবার তাশাহুদ,দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। 

হাদিস ০১ঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুল (সাঃ) বলেন; ভুল হল এই যে, নামাজি ব্যক্তি বসার জাইগায় দাঁড়িয়ে যাওয়া। অথবা দাঁড়ানোর জায়গায় বসে যাওয়া, বা (তিন বার চার রাকাত নামাজে) দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেয়া। তাহলে এমন ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পর দুই সেজদা করবে, তারপর তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে। (তাহাবী শরীফ-হাদীস নং-২৫৬৫)

হাদিস ০২ঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ (রাঃ) ছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের (রাঃ), হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ), হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) প্রমূখ সাহাবাগণ থেকে সালাম ফিরানোর পর (দুই সিজদা) সাহু সেজদা করা প্রমানিত আছে। (শরহু মাআনিল আসার-হাদীস নং-২৫৬৪)

হাদিস ০৩ঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন; তোমাদের মাঝে যখন কারো নামজের ব্যাপারে সন্দেহ হয়ে যাবে, তখন তার জন্য উচিত এ ব্যাপারে চিন্তা ফিকির করা, তারপর নামাজ পূর্ণ করে সালাম ফিরাবে তারপর দুই সিজদা করবে। (সহীহ বুখারী-১/৫৮, হাদীস নং-৪০১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৭২)

হাদিস ০৪ঃ হযরত সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন; প্রত্যেক ভুলের কারণে দুই সিজদা দিতে হবে সালাম ফিরানোর পর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১০৩৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১২১৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৪১৭)

হাদিস ০৫ঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন যাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন; যার নামাজে সমস্যা হয়ে যায়, সে যেন দু’টি সেজদা করে সালাম ফিরানোর পর। (সুনানে নাসায়ী-হাদীস নং-১৫৫০)

লেখকের মন্তব্যঃ নামাজের ওয়াজিব কয়টি | নামাজের যে ১৪টি ওয়াজিব পালন করতে হবে

নামজ মন দিয়ে পড়া,নামজের আরকান অর্থাৎ নামাজের সব কাজগুলো ধীরে সুস্থে আদায় করা। কোন ভাবেই তারাহুরো করে নামাজ পড়া যাবেনা। এর কোন ভাবেই নামাজের ওয়াজিব গুলো ত্যাগ করা যাবে না। আল্লাহর কাছে নামজ গ্রহনযোগ্য করার জন্য অবশ্যয় নামাজের ১৪টি ওয়াজিব পালন করতে হবে। 

আশা করি আজ আমরা আপনাদের নামাজের ওয়াজিব কয়টি এবং এই ওয়াজিব কাজ কিভাবে পালন করতে হয় তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং ইসলামিক আরও তথ্য  বিস্তারিত জানার জন্য,আমদের সাইটের ইসলামিক আর্টিকেল্গুলো দেখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url