সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব - ফিতরা কত টাকা ২০২৪

সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব এর সংহ্মিপ্ত উত্তর হচ্ছে- যে ব্যক্তি যাকাত, সদকার টাকা-পয়সা নিতে পারে তার উপর সদকা ফেতরা ওয়াজিব না, যার সদকা ও যাকাত নিয়া দুরুস্ত নাই তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। 

এইরূপ যদি কেউ ৭ বিঘা জমির মালিক হয় এবং ৬ বিঘা জমির ফসলে তার জীবিকা নির্বাহ হয়ে যায়, আর এক বিঘা জমি অতিরিক্ত তখন তার মূল্য ৫২০ তোলা রূপার মূল্যের সমান বা তদূর্ধ্ব হয়,তাহলে তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। সদকাতুল ফিতর এর পরিমাণ কতো এবং ফিতরা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে বিস্তারিত তথ্য জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন। 

সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব

ফিতরা অর্থ কি ?

ফাতুর বা ফিতরা অর্থ ভোরের খাদ্য যা খেয়ে রোজাদারগন রোজা শেষ করে। ফেতরাকে সদকাতুল ফিতর বলে এবং জীবিকা নির্বাহের আবশ্যকীয় উপকরণসমূহকে "হাওয়ায়েজে আসলিয়া" বলে। (২০০ দেরহাম পরিমাণ সম্পত্তির অধিকারীকে মালেকে নেছার বলে। আমাদের দেশী হিসাবে ২০০ দেরহামে ৫২০০ তোলা রূপা হয়।)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন, সেযেন মক্কা নগরীর পথে পথে এ ঘোষণা করে যে, জেনে রেখো প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষ, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রত্যেকের ওপর সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধাসা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু।" (তিরমিযী, হাদিস নং৬৭৪)

ফিতরা কেন আদায় করতে হয় ?

ইদের দিনে ইদের নামাজের আগে ১৩ টি কাজ করা সুন্নাত করতে হয়। যার মধ্যে ৯ নাম্বর সুন্নাত হচ্ছে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। ঈদের নামাযের পূর্বেই সদকাতুল ফিতর দিয়ে পরিষ্কার হওয়া মুস্তাহাব। যদি একান্ত আগে না দিতে পারেন, তবে পরেই দিবেন। পরে দিলেও পূর্বেই সদকাতুল ফিতর আদায় হবে।


সূক্ষ্ম হিসাবে যাদের উপর ফেতরা ওয়াজিব হয় না অথচ দেওয়ার সঙ্গতি আছে, তারা যদি নিজ খুশীতে সদকা দান করে, তবে তা মুস্তাহাব হবে এবং তারা অনেক বেশী সওয়াব পাবে। কারণ, হাদীস শরীফে আছে, "গরীব হওয়া সত্ত্বে কষ্ট করে যে আল্লাহ্র রাস্তায় সদকাহ দেয়, তার দানকে আল্লাহ্ তা'আলা অনেক বেশী পছন্দ করেন।

সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব?

সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব সে বিষয়ে বলতে গেলে, ঈদের দিন সোবহে সাদেকের সময় যে ব্যক্তি হাওয়ায়েজে আলি অর্থাৎ ভূবিকা নির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ (যথা-পরিধানের বস্তু, শয়নের গৃহ এবং আহারের খাদ্য-দ্রব্য) ব্যতীত ৭.০ তোলা সোনা, অথবা ৫২.১০ (সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা। 

অথবা এই মুলোর অন্য কোন সম্পদের মালিক থাকবে, তার উপর ফেরা দেওয়া ওয়াজির হবে। সম্পদ ব্যবসায়ের জন্য হউক বা না হউক, বা সে মালের বছর অতিবাহিত হউক বা না হউক। আবার কারও বসবাসের অনেক বড় ঘর আছে, বিক্রয় করিলে হাজার পাঁচশ টাকা দাম হবে। 

পরিধানের দামী দামী কাপড় আছে, কিন্তু তা জরীদার না, ২/৪ জন খেদমতগারও আছে, হাজার পাঁচশ টাকার প্রয়োজনীয় সম্পদ আসবাব আছে, কিন্তু অলংকার নাই। এই সমস্তই কাজে ব্যবহৃত হয়, কিংবা কিছু মালপত্র প্রয়োজন অপেক্ষা বেশী আছে এবং জরী, অলংকারও আছে, কিন্তু যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ না, এমন লোকের উপর সদকাতুল ফেতর ওয়াজিব না।

যাদের  উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব

  • নারীরা গহনা হাওয়ায়েজে আসলিয়ার মধ্যে গণ্য না। কাজেই যে নারীর কাছে ৫২.০ তোলা রূপা বা সমমূল্যের গহনা থাকবে তার উপর ফেতরা ওয়াজিব হইবে। 
  • যদি  কেউ ঋণগ্রস্ত থাকে, তবে ঋণ বাদে যদি মালেকে নেসার নয়, তবে ফেতরা ওয়াজিব হইবে নতুবা নয়। 
  • ঈদের দিন যে সময় সবহে সাদেক হয়, সেই সময় সদকাতুল ফেতরা ওয়াজিব হয়। কাজেই যদি কেউ সবহে সাদেকের আগে মারা যায়, তবে তার উপর সদকাতুল ফেতর ওয়াজিব হইবে না, তার সম্পত্তি হতে দিতে হবে না এবং মালেকে নেছাবের যে সন্তান সবহে সাদেকের পূর্বে জন্মিবে তার ফেতরা দিতে হবে। যে সবহে সাদেকের পরে জন্মাবে তার দিতে হবে না।
  • মালেকে নেছার পুরুষের একটি সাবালেগ সন্তান যদি পাগল হয়, তবে তার পক্ষ হতে ফেতরা দেওয়া পিতার উপর ওয়াজিব।
  • কোন এতীম সন্তান যদি মালেকে নেছাব হয়, তবে তাদেরও ফেতরা দিতে হইবে।
  • মেয়েলোকের শুধু নিজের ফেতরা দেওয়া ওয়াজিব। স্বামী, সন্তান, মা, বাবা বা অন্য কারও পক্ষ হতে ওয়াজিব না।
  • পুরুষের নিজেরও ফেতরা দিতে হবে এবং নিজের ছেলেমেয়েদের পক্ষ হতেও দিতে হবে। সন্তান না-বালেগ হলে তাদের ফেতরা দেওয়া পিতার উপর ওয়াজিব। 

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ২০২৪

ফেতরার সঙ্গে রোজার কোন সম্পর্ক নেয়, তারা দুইটি পৃথক পৃথক ইবাদত। অবশ্য এই ইবাদতের তাকীদ হয়। অতএব যারা কোন কারণে রোজা না রাখে, ফেতরা তাদের উপরও ওয়াজিব। আর যারা রাখে তাদের উপরও ওয়াজিব। উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। যদি কেউ ঈদের দিন ফেতরা না দেয়, তবে তার ফেরা মাফ হয়ে যাইবে না, অন্য সময় দিতে হবে।

ফেতরা যদি গম বা গমের আটা বা চাল দ্বারা আদায় করতে চান, তবে আধাছা অর্থাৎ ৮০ তোলার সেরে, এক কেজি সাড়ে বার গ্রাম দিতে হবে। কিন্তু পূর্ণ দুই কেজি দিয়ে দেওয়াই উত্তম। কেননা, বেশী দিলে কোন ক্ষতি নাই বরং বেশী সওয়াব পাওয়া যাবে, তাছারা কম হলে ফেতরা আদায় হবে না। 


সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হচ্ছে; যদি গম বা চাল না দিয়ে উপরোক্ত পরিমাণ গম বা চালের মূল্য নগদ টাকা দিয়ে দেন তবে তা সবচেয়ে উত্তম। একজনের ফেতরা একজনকে দেওয়া বা একজনের ফেতরা কয়েকজনকে ভাগ করিয়া দেওয়া উভয়ই জায়েয আছে। যদি কয়েকজনের ফেতরা একজনকে দেওয়া হয় তাও দুরুস্ত আছে।

ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে ?

যার জন্য যাকাত খাওয়া হালাল, তার জন্য ফেতরা খাওয়াও হালাল। অনেকেই প্রশ্ন করেন যে ফেতরা কাকে দিওয়া যাবে? তার উত্তর হচ্ছে- 
  • আত্মীয়-স্বজন 
  • পাড়া-প্রতিবেশী 
  • পার্শ্ববর্তী লোকদের মধ্যে যারা গরীব-দুঃখী 
এদেরকে সদকাতুল ফিতর দিতে হবে। সাইয়্যেদকে, মালদারকে, মালদারের নাবালেগ সন্তানকে এবং নিজের মা, বাবা, দাদা, নানা, নানী বা নিজের ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনী ইত্যাদিকে ফেতরা ও যাকাত দেওয়া জায়েয না। অবশ্য সাইয়্যেদ বা মা, বাবা, দাদা, দাদী, নানা, নানী বা ছেলেমেয়ে, নাতি, নাতনী যদি গরীব হয়, তবে তাদেরকে হাদিয়া-তোহফা স্বরূপ পৃথকভাবে দান করে সাহায্য করতে হবে। 

তাছারা, মসজিদের ইমাম, মোয়াযযিন বা তারাবীহর ইমাম গরীব হলে তাদেরকেও ফেতরা দেওয়া দুরুস্ত আছে, কিন্তু নেছাব পরিমাণ দেওয়া যাবে না এবং বেতন স্বরূপও দেওয়া যাবে না। বেতন স্বরূপ দিলে ফেতরা আদায় হবে না।

যদি কেউ মাত্র দুইটি বাড়ীর মালিক হয়, এক বাড়ীতে নিজে পরিবার নিয়ে থাকে, অন্য বাড়ী খালি পড়ে থাকে অথবা ভাড়া দেওয়া হয়, তবে দ্বিতীয় বাড়ীটিকে হওয়ায়েজে আসলিয়ার মধ্যে গণ্য করা যাবে না, অতিরিক্ত বলা হবে। কাজেই দেখতে হবে যদি বাড়ীটির মূল্য ৫২০ তোলা রূপার মূল্যের সমান বা তদূর্ধ্ব হয়, তবে তার উপর সদকায়ে ফেতরা ওয়াজিব হবে।


এমন লোককে যাকাত দেওয়া জায়েয না। কিন্তু যদি এই বাড়ীর ভাড়ার উপরই তার জীবিকা নির্বাহ নির্ভর করে, তবে বাড়ীকে হওয়ায়েজে আসলিয়ার মধ্যে গণ্য করতে হবে এবং তার উপর সদকায়ে ফেতরা ওয়াজিব হবে না। এমন ব্যক্তি সদকায়ে ফেতরা নিতে পারে এবং তাকে দেওয়াও জায়েয আছে।

লেখকের মন্তব্যঃ সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব - ফিতরা কত টাকা ২০২৪

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সদকায়ে ফিতরকে ওয়াজিব করেছেন, রোজাকে ভুল-ক্রটি থেকে পবিত্রকরণ ও দরিদ্রদের পানাহারের ব্যবস্থা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করবে তার ফিতরা মকবুল হিসেবে গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পরে আদায় করবে, তার ফিতরা সাধারণ সাদকা হিসেবে গণ্য হবে"। (জামেউল ফাওয়ায়েদঃ ১/১৪৫)।

আশা করি আমাদের আর্টিকেল পড়ে সদকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। আমাদের সাইটের সকল ইলামিক তথ্য বেহেশতী জেওর এর মতো বিশ্বস্ত সূত্র হতে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url