এজমা থেকে মুক্তির উপায়

আজকে আমরা আলোচনা করব এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। যারা এজমা রোগে ভুগছেন তারা অনেকেই এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে চান। এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানলে আপনি এজমা রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন।

এজমা থেকে মুক্তির উপায়
এজমা রোগ হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ রোগ থেকে বাঁচার কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেই এজমা থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্র: এজমা থেকে মুক্তির উপায়

ভূমিকা

বর্তমানে এজমা সমস্যায় অনেক মানুষ ভুগে থাকেন। বিশেষ কারণবশত শ্বাসনালী সরু হয়ে গেলে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত এটি কে আমরা এজমা বা হাঁপানি বলি। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁপানি বা এজমা বংশগত স্থায়ী এক ধরনের রোগ। যেহেতু এই রোগটি বংশগত তাই এটি একেবারে নিরাময় সম্ভব নয়। এজমা রোগ একবারে নিরাময় করার কোন সমাধান এখনো পাওয়া যায় নি। তবে এই রোগ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।

এটি কোন মরণঘাতী রোগ নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে ঔষধ এবং জীবন যাপন পরিবর্তন করলে এজমা রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে এখনো অনেকে জানেন না। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি মেনে আপনি সহজেই এজমা থেকে মুক্তি পাবেন। এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

এজমা কেন হয়

এজমা রোগটি হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এজমা রোগটি কি কারনে হয় এটা এখনো অনেকের অজানা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বংশগত এবং পরিবেশগত কারণেই এজমা রোগটি হয়ে থাকে। এজমা রোগটি কেন হয় এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।
  • শীতকালে অনেক শিশুর ঠান্ডা লেগে এজমা রোগটি হয়ে থাকে।
  • পরিবেশের ধুলাবালির কারণে এজমা হয়ে থাকে।
  • পশুর লোম, পরাগরেণু এবং ধুলাবালির মাধ্যমে এজমা রোগটি হয়ে থাকে।
  • বংশগত কারণে শিশুদের এজমা রোগ হয়ে থাকে।
  • যারা গার্মেন্টস কিংবা ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন তাদের এজমা রোগ হয়ে থাকে।
  • শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থেকে এজমা রোগ হতে পারে।
  • বংশের কারো বা রক্তের সম্পর্কের মধ্যে কারো এজমা সমস্যা হলে বংশের অন্যান্যদের এজমা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এজমা হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

এজমা রোগটি হলে অনেক কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নিচে এজমা হলে কি কি খাওয়া যাবেনা তা আলোচনা করা হলো।
  • ঠান্ডা জাতীয় খাবার: সাধারণত এজমা হলে ঠান্ডা জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। ঠান্ডা জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে দই, ঠান্ডা দুধ এবং আইসক্রিম। এজমা রোগীরা এসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এসব খাবার খেলে এজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
  • গ্যাস জাতীয় খাবার: এজমা রোগীরা যেসব খাবার খেলে গ্যাস হয় সেই খাবারগুলো গ্রহন থেকে বিরত থাকুন। কারণ অতিরিক্ত গ্যাস হলে এজমা সমস্যা বেড়ে যায় তাই গ্যাস জাতীয় খাবার যেমন: ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত পেঁয়াজ, রসুন এবং কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। অনেক শিশুরা ফাস্টফুড খাওয়ার কারণে এজমা রোগের শিকার হয়। তাই এজমা রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই গ্যাস জাতীয় খাবার পরিহার করবেন।
  • প্রিজারভেটিভ জাতীয় খাবার: প্রিজারভেটিভ জাতীয় খাবার এজমা রোগের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রিজারভেটিভ জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রিজারভেটিভ জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে আচার এবং লেবুর রস। এসব খাবার দীর্ঘদিন ধরে রেখে দেওয়া হয় তাই এগুলোকে প্রিজারভেটিভ জাতীয় খাবার বলা হয়। এজমা রোগীদের এসব খাবার বর্জন করা ভালো।
  • এসিড যুক্ত খাবার: এসিড যুক্ত খাবার গুলো এজমা রোগীদের বর্জন করা ভালো। এসিড যুক্ত খাবার খেলে এজমা সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
এজমা রোগীদের উপরোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে সহজেই এজমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে।

    এজমা থেকে মুক্তির উপায়

    এজমা রোগে ভুগলেও এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এজমা একটি বংশগত রোগ তাই এটি নিরাময় একেবারে সম্ভব নয়। তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি এজমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে সকলের জানা প্রয়োজন। নিচে এজমা থেকে মুক্তির উপায় গুলো আলোচনা করা হলো।
    • হলুদ: এজমা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ব্যবহার করুন হলুদ। হলুদে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ যা এজমা রোগ থেকে আপনাকে মুক্তি দান করবে। হাফ কাপ দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে এজমা রোগ কমে যেতে পারে। আপনার যদি শ্বাসকষ্ট থেকে থাকে তাহলে সেটাও সেরে যাবে।
    • মধু: প্রাচীনকাল থেকে মধু বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন রাতে এক চা চামচ মধুর সাথে দারুচিনি মিশিয়ে নিয়মিত খেলে এজমা সমস্যা দূর হয়। মধু খেলে শ্বাসকষ্ট জমিতে সমস্যা দূর হয়। শ্বাসনালীতে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। এজমা রোগ ছাড়াও সর্দি কাশিতে মধু খেতে পারেন। এতে অনেক উপকার পাবেন। তাই এজমা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নিয়মিত খান মধু।
    • আদা: আদাতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ যা এজমা রোগ সারাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আদা চা খেতে পারেন এতে আপনার এজমা সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়া আপনি এক টুকরো আদা গরম পানিতে ফুটিয়ে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার এজমা সমস্যা এবং সর্দি কাশি জনিত সমস্যা দূর হয়ে গেছে। তাই এজমা রোগ সারাতে আদার ভূমিকা অতুলনীয়।
    • ল্যাভেন্ডার তেল: এজমা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ব্যবহার করুন ল্যাভেন্ডার তেল। এক কাপ গরম পানির ভেতর পাঁচ ছয় ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মিশ্রিত করে সেই গরম পানির ভাপ নিন। দেখবেন এজমা সমস্যা অনেকটা কমে গেছে।
    • রসুন: এজমা রোগ সারাতে ব্যবহার করুন রসুন। এক কাপ দুধের মধ্যে কয়েক কোয়া রসুন দিয়ে ফুটাতে থাকুন। মিশ্রনটি ঠান্ডা করে নিয়ে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন অনেক উপকার পাবেন। এই মিশ্রণটি শ্বাসনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। তাই এজমা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে খুবই উপকারী হল রসুন।
    • পাতি লেবু: এজমা চিকিৎসায় ব্যবহার করুন পাতি লেবু। লেবু অনেক রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা এজমা রোগ দূর করতে সহায়তা করে। এক ক্লাস পানির মধ্যে একটা গোটা পাতি লেবুর রস সম্পূর্ণ দিয়ে দিন। এরপর মিশ্রণটিকে পান করুন দেখবেন সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
    • ব্ল্যাক কফি: এজমা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নিয়মিত পান করুন কফি। কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন শ্বাসনালীর সমস্যা দূর করে এবং এজমা সমস্যা থেকে মুক্তি দান করে। নিয়মিত ব্ল্যাক কফি খেলে এজমা সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। তাই এজমার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ব্ল্যাক কফি পান করুন।
    • পেঁয়াজ: এজমা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। পেঁয়াজ খেলে নাসাপথ পরিষ্কার হয়। তাই এজমা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পেঁয়াজ খেতে পারেন। নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে এজমা সমস্যা দূর হয়।
    উপরোক্ত উপায় গুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি এজমা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন। আশা করছি উপরের বিষয়গুলো পড়ে আপনি এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

    শেষ কথা: এজমা থেকে মুক্তির উপায়

    প্রিয় পাঠক, আজকের এই অনুচ্ছেদে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম এজমা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। আশা করছি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনারা বুঝতে পেরেছেন এজমা থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি কি। এজমা রোগ হলে মানুষ শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।


    এই শ্বাসকষ্ট একজন এজমা রোগীর জন্য অনেক বেদনাদায়ক এবং কষ্টদায়ক। এজমা থেকে মুক্তির উপায় গুলো জানলে আপনি সহজেই এজমা রোগ দূর করতে পারবেন। আমার পোস্টটি পড়ে যদি আপনার উপকার হয় তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার প্রয়োজনীয় মতামত আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ। 

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url