ঈদুল আযহার ফযিলত - কুরবানী ঈদে করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়

ঈদ হচ্ছে মুসলমানদের জন্য আনন্দের উৎসবের একটি দিন।মুসলমানদের জন্য বছরে দুটি ঈদ হচ্ছে সবচেয়ে বড় উৎস।কিন্তু ঈদ উদযাপনে কিছু নিয়ম রয়েছে,ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এই দুটি উৎসবের মধ্যে ঈদুল আযহার বা কোরবানি ঈদের জন্য কিছু করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় বস্তু উল্লেখ্যযোগ্য রয়েছে।যা যথাযথভাবে পালন না করলে ঈদের তাৎপর্য ব্যাখ্যা ঘাটে।আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাবো যে ঈদুল আজহা বা কুরবানীর ঈদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় বস্তু সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

ঈদুল আযহার ফযিলত - কুরবানী ঈদে করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়

সোর্সঃWikipedia 

সূচিপত্রঃকুরবানী ঈদে করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়

কুরবানী ঈদ কি? 

ঈদুল আযহা অথবা কোরবানি ঈদ।আরবিতে কুরবানী ঈদকে ঈদ-উল-আযহা বলে।জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ এই তিন দিন  ঈদুল আযহা উদযাপন করা হয়।ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় দুটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।ঈদ-উল-আযহা হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব।

এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্যাগ।আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রাণীর কুরবানীর করাই হচ্ছে এই উৎসবের মূল বিষয়।ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী মহান আল্লাহ তা'আলা হযরত ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর মাধ্যমে কুরবানী ঈদের সূত্র ঘটান।

কুরবানী করার নিয়ম কি?

কুরবানী করার নিয়ম কি? তা হচ্ছে কুরবানীর জীবকে কেবলার দিকে মুখ করিয়ে শোয়ানোর পর প্রথমেই এই দোয়াটি পড়বেনঃ

, اني وجهت وجهي للذي وتوسماوات والارض حنيفه وما انا من المشركين• ان صلاتي ومسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين• لا شريك له وبذلك امرت وانا من المسلمين- اللهم منك ولك• 

উচ্চারনঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারসমাওয়াতি ওয়াল আরদ হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন।ইন্না সলাতি ওয়ানুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন।লা শারিকা লাহু ওয়াবিযালিকা উমিরতু ওয়ানা মিনাল মুসলিমন-আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।কুরবানী করার নিয়ম উক্ত দোয়াটি পড়ার পর بسم الله الله اكبر (বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার) বলে জবাই করতে হবে। 


জবাই করার পর বলতে হবেঃ

اللهم تقبلت مني كما تقبلت من حبيبك محمد وخليلك ابراهيم عليهما الصلوات والسلام•

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা তাকব্বালতু মিন্নি কামা তাকব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিউ ওয়া খলিলিকা ইবরহীমা আলাইহিমাস সলাতু ওয়াস সালামু।

কুরবানী করার নিয়ম, যদি নিজের কোরবানি হয় তবে مني বলতে হবে। আর যদি অন্যের কোরবানি হয় তবে من শব্দের পর যার বা যাদের কোরবানি তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে।আবার যদি অন্যের সঙ্গে অংশীদারিত্ব থাকে তবে مني বলতে হবে এবং مني বলার পর من যুক্ত করে তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে।

কুরবানীর মাসআলা-কুরবানী ঈদে করণীয় ও বর্জণীয় বিষয়। ঈদুল আযহার ফযিলত

  1. যার ওপর সদকা ফিতর ওয়াজিব তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।অর্থাৎ ১০ ই জিলহজ হতে ১২ ই জিলহজের সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যেকোন সময় যদি মালেকে নেসাব (সামর্থ্যবান ব্যক্তি) হয় তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।যার পর্যাপ্ত সম্প্রতি নেয় তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে না।কিন্তু ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও যদি করতে পারে তবে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
  2.  মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
  3. ১০ই জিলহজ হতে ১২ই জিলহজের সন্ধ্যা পর্যন্ত এই তিনদিন কুরবানী করার সময় এই তিন দিনের যেদিন ইচ্ছা সেদিন কুরবানী করতে পারা যায় কিন্তু প্রথম দিন সর্বাপেক্ষা উত্তম তারপর দ্বিতীয় দিন তারপর তৃতীয় দিন। 
  4. বক্বরা ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা উচিত নয়।ঈদের নামাজের পর কুরবানী করতে হয়।অবশ্য যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ উচিত নয় সেই স্থানে ১০ই জিলহজ কোরবানি করা উচিত আছে।
  5. কোন শহর বা নগরবাসী যদি নিজের কোরবানির জীব এমন স্থানে পাঠায় যেখানে জুমা ও ঈদের নামাজ জায়েজ নয় তবে সেখানে ঈদের নামাযের পূর্বে কোরবানি করা উচিত হবে যদিও সে নিজের শহরে থাকে। পশু জবাই করার পর সেখান থেকে গোশত এনে খেতে পারি । 
  6. ১২ ই জিলহজ সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে পর্যন্ত কোরবানি করা উচিত আছে।কিন্তু সূর্য অস্ত হয়ে গেলে কোরবানি করা আর ঠিক হবে না। 
  7. কোরবানির তিনদিনের মধ্যে যে দুটি রাত পড়ে সেই দুই রাতেও  কুরবানী করা জায়েয আছে কিন্তু রাতের বেলায় পশু জবাই করা ভালো নয়।
  8. কেউ যদি ১০ই জিলহজ এবং ই জিলহজ তারিখে কোন সফরের ছিল অথবা গরিব ছিল এবং ১২ ই জিলহজ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে বাড়ি এসেছে বা বেশি সম্পত্তির মালিক হয়েছে অথবা কোথাও ১৫ দিন থাকার নিয়ত করেছে এ অবস্থায় তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।
  9. কুরবানী করার নিয়ম,নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। তবে যদি নিজে জবাই করতে না পারে অন্যের দ্বারা জবাই করানো উচিত কিন্তু নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো।যদি কোন মহিলাদের পর্দার ব্যাঘাত ঘটে সে ক্ষেত্রে তিনি সামনে উপস্থিত না থাকতে পারে,এতে কোন ক্ষতি নেই। 
  10. কোরবানি করার সময় মুখে নিয়ত করা ও দোয়া উচ্চারণ করা খুব প্রয়োজনীয় নয়।যদি শুধু মনে মনে নিয়ত করে এবং মুখে "বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার" বলে জবাই করে তবুও কোরবানি হয়ে যাবে।কিন্তু যদি দোয়া মনে থাকে তাহলে উক্ত দোয়া দুটি পড়া উত্তম হবে। 
  11. কোরবানির শুধু নিজের তরফ হতে ওয়াজিব হয়।এমনকি যদি নাবালক সন্তান অনেক সম্পত্তির মালিক হয় তবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না এবং মাতা পিতার উপরও কোরবানি  ওয়াজিব হয় না।যদি কেউ সন্তানের পক্ষ হতে কুরবানী করতে চায় তবে তা নফল কুরবানী হবে।কিন্তু নাবালকের সম্পত্তি থেকে কিছুতেই কোরবানি করা যাবে না। 
  12. বকরি,খাসী,ভেড়া,দুম্বা,গাভী,ষাঁড়,মহিষ,উট এই কয় প্রকার গৃহপালিত জন্তু কোরবানি করা জায়েজ আছে।এগুলো ব্যতীত হরিণ ইত্যাদি অন্যান্য হালাল বন্যপ্রাণী দ্বারা কুরবানী আদায় হবে না।
  13. গরু, মহিষ ,উট এই তিন প্রকার প্রাণী এক একটি প্রাণী ১ থেকে ৭ জন পর্যন্ত অংশীদার হয়ে কোরবানি করতে পারবে।তবে কোরবানির সঠিক ভাবে করার শর্ত হচ্ছে এই যে,কারো অংশ যেন ৭ ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম না হয় এবং কারো যেন শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত না থাকে,সকলেরই জানা উত্তমরূপে কোরবানির নিয়ত থাকে অবশ্য যদি কারো আক্বিকা করার নিয়ত হয় তবে তা করা যেতে পারে।কিন্তু যদি মাত্র একজনের শুধু গোশত খাওয়ার নিয়ত হয় তাহলে কোরবানী অথবা আক্বিকার ক্ষেত্রে কারোই কুরবানী জায়েয হবে।একইভাবে যদি মাত্র একজনের অংশ সাত ভাগের এক ভাগ এর চেয়ে কম হয়, তবে সকলের কুরবানি নষ্ট হয়ে যাবে। 
  14. যদি একটি গরুর সাতজনের কম ৫/৬ জন অংশীদার হয় এবং কারও অংশ সপ্তমাংশ হতে  কম হয়(৭০ টাকা দিয়ে গরু কিনলে কারো অংশ যেন ১০ টাকার কম না হয়)তবে সকলের কুরবানীতে যায়েজ হবে।
  1. যদি গরু কিনার আগে ৭ জন অংশীদার সবাই মিলে গরুটি কিনে তবে তা অতি উত্তম,আর যদি কেউ একা একটি গরু কোরবানির জন্য কিনে এবং মনে মনে এই চিন্তা রাখে যে পরে আরও লোক অংশীদার হিসেবে নেবে,সেক্ষেত্রে কুরবানী করা জায়েয হবে।কিন্তু যদি গরু কিনার সময় অংশিদার নেয়ার ইচ্ছা না থাকে,একা একাই কোরবানি করার নিয়ম চাই,পরে আবার অন্যকে শরীর করতে চাই,এমন অবস্থায় যদি ওই ক্রেতা গরিব হয় এবং তার উপর কুরবানী ওয়াজিব না হয় তবে পরে সে অন্য কাউকে শরিক করতে পারবে না।একা একাই কোরবানির গরু কোরবানি করতে হবে।আর যদি ঐ ক্রেতা সম্পদশালী হয় এবং তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় তবে ইচ্ছা করলে পরে অন্য লোককেও অংশীদার করতে পারে।(তবে নেক কাজের নিয়ত বদলানো ভালো নয়।)
  1. যদি কোরবানির জীবটি হারিয়ে যায় এবং তার পরিবর্তে অন্য একটি জীব ক্রয় করা আনলে এবং পরের জীবটি যদি পাওয়া যায়,এমন অবস্থায় ক্রেতা যদি সম্পদশালী হয় তবে একটি জীব কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।কিন্তু ক্রেতা যদি গরিব হয় তবে উভয় জীব কোরবানি করা তার উপর আজ এভাবে। 
  2. কোরবানির জীব ক্রয় করার পর যদি তার বাচ্চা জন্ম নেয় তবে ওই বাচ্চাটিকেও কোরবানি করে গরীব মিসকিনদের কে দিয়ে দিতে হবে,তা নিজে খাওয়া যাবেনা।আবার প্রাণীটির বাচ্চাটিকে জবাই না করে গরিবদের কে দান করে দেওয়া জায়েজ আছে। 
  3. ৭ জন অংশীদার হয়ে যদি একটি গরু কুরবানী করে,তবে গোশত আন্দাজে ভাগ করা যাবে না।পাল্লা দ্বারা পরিমাণ করে সমান ভাগে ভাগ করতে হবে।কারণ যদি ভাগ এর মধ্যে কিছু কম-বেশি হয়ে যায় তবে তা সুদে পরিণত হয়ে যাবে এবং গুনাগার হতে হবে।অবশ্য যদি গোস্তের সঙ্গে মাথা,পায়া,এবং চামড়া ভাগ করে দেয়া হয় তবে যেভাবে মাথা,পায়া আবার চামড়া থাকবে সেভাবে গোস্ত কম থাকলে কোন সমস্যা হবে না।কিন্তু যে ভাগে গোশতের ভাগ বেশি সেভাবে মাথা,পায়া আবার চামড়া দিলে সুদে পরিণত হয়ে যাবে যা যায়েজ নয়।
  4. বকরি অথবা ছাগল পূর্ণ এক বছরের কম বয়সের হলে কুরবানী দেওয়া ঠিক হবে না।এক বছর পূর্ণ হল এই দিতে হবে।গরু-মহিষ দুই বছরের কম হলে কুরবানী করা যাবে না।পূর্ণ দু'বছরের হলেই তা জায়েয হবে।উঠ ৫ বছরের কম হলে জায়েজ হবেনা কোরবানি করা।দুম্বা এবং ভেড়ার একইভাবে এক বছরের কম হলে কুরবানী করা জায়েয হবে না,কিন্তু ছয় মাসের বেশি বয়সের দুম্বার বাচ্চা যদি এরূপ মোটাতাজা হয় যে এক বছরের বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিলে চিনা যাবে না তবে সেরকম বাচ্চা কুরবানী করা জায়েয আছে।কিন্তু ছাগলের বাচ্চা যদি এরূপ মোটাতাজা হয় তবুও এক বছর পূর্ণ না হলে কুরবানী করা জায়েয হবে না। 
  5. যদি কোনো জীবের দুটি চোখ অন্ধ অথবা একটি চোখ বন্ধ বা একটি চোখের তিনভাগের একাংশের বেশি দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে থাকে,তবে এরূপ জন্তু কুরবানী করা জায়েয হবে না। 
  6. জীবনে যদি এমন কৃষি ও শুষ্ক হয় যে তার হাড়ের মধ্যে মগজের শুকিয়ে গেছে,সে ক্ষেত্রে যন্ত্রটি কুরবানী করা জায়েয হবে না।
  7. যে পশুর  একটি দাঁতও নেই সে অসুর  কুরবানী জায়েজ না।আর যতগুলি দাঁত পড়ে গেছে তার অপেক্ষা যদি অধিসংখ্যক দাঁত বাকি থাকে তবে কুরবানী দুরস্ত বা যায়েজ হবে। 
  8. যে পশুর কান জন্ম হতে নাই তার কুরবানী জায়েজ না।আবার কান হয়েছে এমন পশু কিন্তু অতি ছোট তবে তার কুরবানী জায়েজ আছে। 
  9. যে পশুর শিং উঠেনি পাসিং উঠেছিল কিন্তু ভেঙে গেছে,সে পশুর কুরবানী জায়েজ আছে। কিন্তু যদি সিং একদম মূর্হতে ভেঙে যায় তবে কোরবানি যায়েজ হবে না। 
  10. কোরবানির গোশত নিজে খাইতে পারবে এবং নিজের পরিবারকেও খাওয়াতে পারবে এবং টিফিন কি হাদিয়া-তওফা হিসেবে এবং গরিব মিসকিনকে খয়রাত হিসেবে দান করে দিতে হবে।মুস্তাহাব নিয়ম এইযে,তিন ভাগ করার পর একটি ভাগ গরিব মিসকিনদের দান করতে হবে। 
  11. কুরবানীর চামড়ার দাম মসজিদ মেরামত বা অন্য কোন নেক কাজে খরচ করা জায়েজ নেই,চামড়ার টাকাটি খয়রাত হিসেবে দান করতে হবে।
  12. যদি চামড়া নিজের কাজে ব্যবহার করে যেমন;চালুন,মশক,ঢোল বা জায়নামাজ তৈরি করে তবে তা জায়েয আছে ।
  1. কুরবানীর ঈদের করণীয় ,কোরবানির পশু জবাইকারি ও গোশত প্রস্তুতকারীর পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দিতে হবে,কুরবানীর গোশত চামড়া,কল্লা পায়ার দ্বারা দিবানা। 
  2. গরিবের কোরবানি ওয়াজিব নয় বটে কিন্তু যদি কোরবানির নিয়ত করে কোন পশু কিনে আনলে তবে,তার নিয়তের কারণে সেই পশু কুরবানী করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যাবে। 
  3. কোন ব্যক্তির কুরবানী ওয়াজিব ছিল কিন্তু কোরবানির তিনটি দিনই গত হয়ে গেছে কুরবানী করতে পারেনি ।এমন অবস্থায় একটি বকরি, ছাগল অথবা ভেড়ার মূল্য খয়রাত হিসেবে দান করে দিতে হবে ।আর যদি কোন ছাগল অথবা ভেড়া ক্রয় করে থাকে তাহলে উক্ত পশুটি খয়রাত করে দিতে হবে। 
  4. যদি নিজের খুশিতে কোন মৃত্যু ব্যক্তিকে সোওয়াব পৌছানোর উদ্দেশ্য নিয়ে কুরবানী করে তবে তা জায়েয আছে এবং ঐ পশুর গোস্ত নিজেও খেতে পারবে ও এবং যাকে ইচ্ছা দান করতে পারবে। 
  5. কিন্তু যদি কোন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর আগে কোরবানির জন্য নিয়ত করে গিয়ে থাকে, তবে সে কুরবানীর গোশত সমস্ত খয়রাত হিসেবে দান করা ওয়াজিব হবে।
  6. কারো অনুপুস্থিতিতে যদি অন্য কেউ তার পক্ষ নিয়ে বিনা অনুমতিতে কোরবানি করে,তবে কোরবানী সহি বা শুদ্ধ হবে না।আর যদি কোন পশুর মধ্যে অনুপস্থিতি ব্যক্তির অংশ আর বিনা অনুমতিতে দেয়া হয়,সেক্ষেত্রে অন্যান্য অংশীদার দেও কুরবানী শুদ্ধ হবে না কুরবানী ঈদে বর্জণীয়
  7. যদি একটি গরু কয়েকজন মিলে কুরবানী করে এবং প্রত্যেকেরই গরিব-মিসকিনকে বিলিয়ে দেওয়া অথবা রান্না করে খাওয়ানোর নিয়ম থাকে,সেক্ষেত্রে কুরবানী জায়েয হবে।কিন্তু ভাগ করতে হলে সমানভাবে দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ভাগ করতে হবে। 
  8. কোরবানির গোশত কাফেরদেরকে দান করা জায়েজ আছে। কিন্তু মজুরিসরূপ দেওয়া জায়েজ নাই কুরবানী ঈদে বর্জণীয়। 
  9. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয আছে যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তবে সে বাচ্চাও জবাই করে দিতে হবে। 

সংগৃহিতঃ বেহেশতী জেওর ৩য় খন্ড

কুরবানী ঈদে করণীয়। ঈদুল আযহার ফযিলত

কুরবানীর ঈদের করণীয় বিষয় হচ্ছে;

✅ পবিত্রতা অর্জন করাঃঈদের নামাজ আদায় করার আগে অজুও গোসল করার মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করা করা সুন্নাত।হাদীসে এসেছে,হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।(মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

✅ ঈদের দিন অধিক পরিমাণে আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করে বেশি বেশি করে তাকবীর পাঠ করা উত্তম।যা কুরবানীর ঈদের করণীয়।

✅ ঈদের দিন ঈদগাহে একপদী প্রবেশ করা এবং নামাজ শেষে অন্য পথ দিয়ে বের হওয়া এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহে প্রবেশ করা হচ্ছে সুন্নাত।(বুখারী,হাদিস :৯৮৬)&(ইবনে মাজাহ,হাদিস:১০৭১)

✅ ঈদের নামাজ হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।যা ঈদের সকল নফল নামাজের চেয়ে অধিক ফজিলতপূর্ণ।ফজরের নামাজের পড়ে এবং ঈদের নামাযের পূর্বে অন্য কোন নামাজ নেই।

✅ হাদীসে এসেছে যে, সকালবেলা কিছু না খেয়ে ঈদের সালাত এগিয়ে যাওয়া এবং সালাত শেষে ফিরে এসে কুরবানির গোস্ত খাওয়া উত্তম।না খেয়ে ঈদের সালাতে  বা নামাজ পড়তে যাওয়া হচ্ছে নবীজির সুন্নত। 

✅ কুরবানী ঈদের দিনে সম্পদশালী বা যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য আছে তাদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব।

✅ কুরবানী ঈদের জবাইকৃত পশুর রক্ত,মল ও হাড় থেকে যেন কোনভাবে পরিবেশ দূষিত না হয় সে বিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানকে সতর্ক থাকতে হবে।কুরবানীর ঈদের করণীয় কোরবানির শেষ হয়ে যাওয়ার পর পশুর রক্ত,মল ও হাড় নির্দিষ্ট কোন স্থানে ফেলতে হবে অথবা মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে।

কুরবানী ঈদে বর্জণীয়। ঈদুল আযহার ফযিলত 

✅ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ঈদের দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।অর্থাৎ দুই ঈদের দিনে কোন প্রকার রোজা রাখা হারাম।(সহি বুখারী ও মুসলিম।)

✅ দিনে ফজরের পর প্রত্যেক মুসলমানের প্রথম উদ্দেশ্য হবে ঈদের নামাজের প্রস্তুতি করা।ঈদের নামাজ আদায় না করে ঈদ উদযাপন করা মোটেও ভালো কাজ নয় এটি কুরবানী ঈদে বর্জণীয়
।ঈদের দিনে ঈদের সালাত আদায় করা এবং কুরবানী করা হচ্ছে মুসলমানদের প্রধান কাজ।


✅ ঈদের নামাজ আদায় করতে মেয়েরাও ঈদগাহে যেতে পারে কিন্তু খুব শালিনতা এবং সংযমতার সাথে,বেপর্দা অশ্লীলভাবে নয়।

✅ ঈদের দিনকে কবর জিয়ারত করার বিশেষ দিন বলে মনে করে কবর জিয়ারত করা একটি বিদআত।(সহহি ফিকহুস সুন্নাহ:১/৬৬৯)

✅ ঈদের দিন ঈদ উপলক্ষে কোন প্রকার মেলা বা গান-বাজনা অথবা অবৈধভাবে নারী-পুরুষ চলাফেরা ইত্যাদির আয়োজন থাকে এমন কোন জায়গা বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা দেয়া সম্পূর্ণভাবে হারাম ও কুরবানী ঈদে বর্জণীয়।

শেষকথাঃ কুরবানী ঈদে করণীয় ও বর্জণীয় বিষয় 

কুরবানী ঈদের কুরবানী করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় ।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেনঃকুরবানীর সময় আল্লাহর নিকট কুরবানীর চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোনো জিনিস নেই।কুরবানীর সময় কুরবানী হচ্ছে সবচেয়ে বড় ইবাদত। কুরবানী জবাই করার সময় প্রথম যে রক্তের ফোটা পড়ে ,তা মাটি পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই কুরবানী আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়(সুবহানাল্লাহ)।অর্থাৎ একান্ত ভক্তি ও আন্তরিক আগ্রহের সাথে খুব ভালো পশু দেখে কোরবানি করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা সকলের নেক নিয়তের সাথে করা কুরবানী কবুল করুক।(আমিন)😊 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url