হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়

আপনি যদি হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায় তা আপনার জানা প্রয়োজন। হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব। হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়

সাধারণত হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত ব্যক্তিরা মেডিকেল টেস্টে আনফিট হিসেবে গণ্য হন। চলুন তাহলে জেনে নেই হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায় নাকি নিষেধ রয়েছে।

পোস্ট সূচিপত্র: হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়

ভূমিকা

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারে ভুগে থাকেন। হেপাটাইটিস বি হলে সাধারণত মানুষের লিভার আক্রান্ত হয় বেশি। এই সংক্রমণ স্বল্প এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। হেপাটাইটিস বি কে বলা হয় নীরব ঘাতক এবং আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। যকৃতের প্রদাহকে হেপাটাইটিস বলা হয়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে।


ভাইরাস শরীরের মধ্যে উপস্থিত থাকে এবং যকৃত কে আক্রান্ত করে বেশি। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি হলে এ রোগের জীবাণু মানুষের শরীরে অনেকদিন পর্যন্ত থাকে। কিন্তু স্বল্প স্থায়ী হেপাটাইটিস বি হলে ৬ মাসের মধ্যে এই রোগ সেরে যায়। হেপাটাইটিস বি রোগ ধরা পড়লে বিদেশে যাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর আজকের এই পোস্টটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

হেপাটাইটিস বি সম্পর্কে

সারা বিশ্বের মানুষ যে গুরুতর সংক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত সেটি হল হেপাটাইটিস বি। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে। এই রোগটি হলে সর্বপ্রথম আমাদের লিভার আক্রান্ত হয় এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবছরই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত থাকেন। এ রোগের চিকিৎসা করলে নিরাময় সম্ভব। যকৃত মানবদেহের একটি বড় গ্রন্থি। মানব শরীরে যকৃতের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের শরীরে যেসব কাজ করে থাকে নিচে বর্ণনা করা হলো।
  • যকৃত আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল উৎপাদন এবং অপসারণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • শরীরের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ এর মাধ্যমে রক্তকে বিশুদ্ধ করে রাখে।
  • আমাদের শরীরের ক্ষত বন্ধ করতে যে উপাদান গুলো প্রয়োজন সেগুলো সংশ্লেষণ করে।
  • খাদ্য হজম করার জন্য পিত্তথলিতে পিত্তরস জমা করতে সাহায্য করে।
  • যকৃত আমাদের শরীরে খাদ্যকে গ্লাইকোজেন রূপে জমা রাখে।
  • আমাদের শরীরের ইমিউন ফ্যাক্টর তৈরি করে এবং রক্ত থেকে ব্যাকটেরিয়া সরিয়ে দেয়।
হেপাটাইটিস বি এর ফলে যকৃত বেশি আক্রান্ত হয় এবং হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে এই রোগটা সংক্রমিত হয়।

হেপাটাইটিস বি কিভাবে ছড়ায়

হেপাটাইটিস বি সাধারণত রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এছাড়াও দেহের বিভিন্ন তরল যেমন বীর্য এবং ভ্যাজাইনাল ফ্লুইড এর মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। মাতৃগর্ভে শিশুর মধ্যে প্লাসেন্টার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির টুথব্রাশ এবং রেজার ব্যবহার করলে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। জীবাণুযুক্ত ইনজেকশনের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। যারা ড্রাগ এডিক্টেড তারা এক সিরিঞ্জ অনেক জন ব্যবহার করার মাধ্যমে এই রোগটি মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ

হেপাটাইটিস বি রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত দুই সপ্তার মধ্যে প্রকাশ পায়। এ রোগের লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশ পেতে প্রায়ই চার মাসের মত লেগে যায়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো নাও দেখা দিতে পারে। হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হল।
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।
  • বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • অনেক সময় মাথা ব্যথা দিতে পারে।
  • জ্বর হতে পারে।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং ক্লান্তি ভাব আসতে পারে।
  • পেটে ব্যথা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • বিভিন্ন সন্ধিতে ব্যথা হতে পারে।
  • প্রস্রাবের রং হলুদ এবং গাঢ় হতে পারে।
  • ত্বক এবং চোখের বিভিন্ন অংশ হলুদ হয়ে যেতে পারে।
  • এসব লক্ষণ দেখা দিলেই আপনি বুঝবেন যে আপনার হেপাটাইটিস বি হয়েছে।

হেপাটাইটিস বি রোগ নির্ণয়

হেপাটাইটিস বি রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্তের একটি সাধারণ পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষায় সাধারণত হেপাটাইটিস বি এন্টিজেন টেস্ট করা হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে যদি হেপাটাইটিস বি ধরা না পড়ে তাহলে আল্ট্রাসাউন্ড এবং এল এফ টি করা হয়। এসব টেস্ট করে হেপাটাইটিস বি রোগ নির্ণয় করা হয়। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ এবং ইনজেকশনের ডোজ নির্ধারণ করা হয়।

হেপাটাইটিস বি এর ডায়েট

হেপাটাইটিস বি এর ডায়েট বলতে যে সকল সুস্বাদু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে তা নয়। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং যেসব খাবার খেলে লিভারের সমস্যা হয় সেই খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। হেপাটাইটিস বি হলে যেসব খাবার খেতে পারবেন নিচে সেই খাবারগুলোর তালিকা দেয়া হলো।
  • হেপাটাইটিস বি এর ডায়েট হিসেবে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন শস্য দানা। গমের রুটি, লাল চাল এসব খাবার ডায়েটে রাখতে পারেন। এছাড়াও অন্যান্য খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, ওটস, রাই ইত্যাদি খাবার গুলো।
  • শাকসবজি এবং ফলমূল আপনার যকৃতের স্বাস্থ্য উন্নত করবে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন শাকসবজি এবং ফলমূল। কারণ এগুলোতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা লিভারকে এ রোগের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। শর্করা জাতীয় খাদ্য যেমন আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ অনেকে দিয়ে থাকেন। আপনি তাজা ফলমূল এবং শাকসবজি আপনার ডায়েটে রাখবেন। হিমায়িত খাদ্য এবং ফল এড়িয়ে চলবেন। বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল আপনার ডায়েটে রাখবেন।
  • হেপাটাইটিস বি এর জন্য ডায়েটে রাখতে পারেন অলিভ অয়েল, ক্যানুলা ওয়েল, ফ্লাক্সিড ওয়েল ইত্যাদি। এসব ওয়েল এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লিপিড। যা রোগীদের ডায়েটের অংশ হিসেবে উপকারী।
  • আপনার ডায়েটে রাখতে পারেন চিকেন, মটরশুঁটির, ডিম এবং কম চর্বিযুক্ত দুধ। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা আপনার লিভার ভালো রাখবে।

হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়

হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায় এ নিয়ে অনেক মানুষের মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। সাধারণত বিদেশে ভ্রমণ কালে কিছু মেডিকেল টেস্ট করাতে হয়। মেডিকেল টেস্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে এইচআইভি, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি। এইসব রোগ মেডিকেল টেস্টে ধরা পড়লে আপনি আনফিট হিসেবে গণ্য হবেন। তাই এই রোগ গুলো বিদেশ যাওয়ার পথে আপনার বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এসব রোগে যেকোনো একটি মেডিকেল টেস্টে ধরা পড়লে আপনাকে বিদেশ যাওয়ার ভিসা প্রদান করা হবে না। এখন হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছেন হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায় নাকি যায় না।

শেষ কথা: হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায় নাকি যায় না। যাদের মনে প্রশ্ন ছিল হেপাটাইটিস বি হলে কি বিদেশ যাওয়া যায়। তারা সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন যে হেপাটাইটিস বি হলে বিদেশ যাওয়া যায় না। হেপাটাইটিস বি আপনার বিদেশ যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করে।


আপনি বিদেশ যাওয়ার পূর্বে হেপাটাইটি বি এর চিকিৎসা করে তারপর বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। আমার পোস্টে যদি আপনার ভালো লাগে এবং আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার মূল্যবান মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url