জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়

এই পৃথিবীর কে না চায় আমার নিজেস্ব এক খণ্ড থাক? আমরা সবাই চাই আমাদের নিজেস্ব জমি, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব "জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়" তা নিয়ে। সবাই যদি এই বিষয়গুলি যাছাই-বাছাই করে জমি কিনেন তাহলে কেউ প্রতারিত হবেন না বলে আশা করছি। রাজউকের প্লান অনুযায়ী আগামী ১০০ বছরে কোন এলাকায় কি কি হবে তার বর্ণনা পাওয়া যাবে। সেই অনুযায়ী যাছাই-বাছাই করে জমি কিনতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়?

  • ভূমিকা। 
  • জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়?
  • জমি কেনার পূর্বে প্রয়োজনীয় পেপারস কিভাবে চেক করতে হয়? 
  • জমি কেনার সময় জমি মালিকের নিকট থেকে কি কি কাগজপত্র নিতে হবে?
  • জমি দলিল করার সময় কি কি করণীয়?
  • জমি কেনার সময় দলিলের সাক্ষী হিসেবে যাদেরকে রাখতে পারেন।
  • জমি কেনার পর কি কি করণীয়? 
  • কেন জমি খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করা জরুরী?
  • অনলাইনে খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করতে কি কি লাগে? 
  • খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করতে কত দিন সময় প্রয়োজন?
  • খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করতে কত টাকা লাগবে?
  • শেষকথাঃ জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়?

ভূমিকা। 


আমাদের দেশে জমি কেনার বিষয়টি সতর্কতার সাথে না করা হলে যে কোন সময় ঝামেলা হতে পারে। মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা যেমন একটি ইস্যু রয়েছে। আবার নানা ধরণের জালিয়াতির শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। যদি আমরা সঠিক ভাবে "জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়" সব কিছু যাছাই-বাছাই করে জমি কিনি তাহলে কোন ত্রুটি ছাড়াই জমি কিনতে পারব ইনশাল্লাহ।


জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়?

জমি সংক্রান্ত আইনজীবীর নিকট হতে পরামর্শ নিয়ে, তাড়াহুড়ো না করে "জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়"সেসকল বিষয় যাছাই-বাছাই করে নিতে পারলে প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও এলাকার এবং সরকারি ভূমি অফিসের তথ্য যাছাই-বাছাই করাসহ অন্য যা যা চেক করা বা লক্ষ্য রাখা জরুরী তা নিয়ে আলোচনা করাই হল আজকের মূল উদ্দেশ্য। আসুন আমরা জেনে নেই "জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়" তা নিয়ে আলোচনা করছিঃ 

১। জমির রেকর্ড কার নামে তা যাচাই-বাছাই করতে হবে (সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ এর রেকর্ড অনুযায়ী)।


 

২। সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ এর সাথে সকল দাগ ও খতিয়ান মিলিয়ে দেখে সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

৩। নামজারির (মিউটেশন) কপি/খারিজের কপি/ নামজারি প্রস্তাবের কপি সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

৪। সর্বশেষ খতিয়ান কার নামে করা আছে, তা নিশ্চিত করতে হবে (অবশ্যই বিক্রেতার নাম হতে হবে)। 

৫। মালিকানা দলিল/জমির পূর্বের সকল মালিকানা হস্তান্তরের দলিল (সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ অনুযায়ী মিলিয়ে নিতে হবে)।

৬। সকল বায়া দলিল/পিট দলিল সংগ্রহ করে যাছাই-বাছাই করতে হবে।

৭। জমির মৌজা ম্যাপ (সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ) চেক করতে হবে।

৮। দাগ নম্বরের সাথে এবং নকশার সাথে মিল আছে কিনা, তা চেক করতে হবে।

৯। রেকর্ডের সাথে খতিয়ানের মিল আছে কিনা, তা চেক করতে হবে।

১০। মালিকানা পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা, তা চেক করতে হবে।

১১। নকশার সঙ্গে দলিলে উল্লেখিত জমির পরিমান ঠিক/মিল আছে কিনা, তা চেক করতে হবে।

১২। কোন দলিল/অন্যান্য পেপার জাল/অবৈধ/ নকল আছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করতে হবে।

১৩। অনলাইনে নিবন্ধিত আছে কিনা এবং সেই অনুযায়ী খাজনা/ভূমি উন্নয়ন করা দেয়া হচ্ছে কিনা, তা চেক করতে হবে।

১৪। খাজনা হাল সন পর্যন্ত পরিশোধ রশিদ আছে কিনা (বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ করা বাধ্যতামক)।

১৫। চলতি বছরের খাজনার রশিদ সংগ্রহ করতে হবে (দেখতে হবে খাজনা কার নামে এবং বিক্রেতার নামে দেয়া হয়েছে কিনা)।

১৬। চলতি বছরের খাজনার রশিদ সংগ্রহ করতে হবে (দেখতে হবে জমির পরিমান ঠিক আছে কিনা)।

১৭। ডিসিআর (পূর্বে মালিকের নিকট হতে জমি ক্রয়কালে দলিল করার সয়ম যে ডিসিআর করা হয়)।

১৮। জমি কিভাবে প্রাপ্ত হয়েছেন/পেয়েছেন (ক্রয়সূত্রে/ উত্তোরাধিকারী সূত্রে/ অন্যান্যসূত্রে) তা নিশ্চিত করতে হবে।

১৯। দখলি স্বত্ব আছে কিনা, তা চেক করতে হবে (দলিলে উল্লেখিত পরিমান জমি)।

২০। ইতিপূর্বে মালিক উল্লেখিত জমি হতে আংশিক বা পূর্ণ জমি অন্যত্র বিক্রি করেছে কিনা, তা চেক করতে হবে।

২১। জমিটি অন্য কোথায় বিক্রি হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

২২। বর্তমানে জমির উপর সরকারী কোন নিষেধাজ্ঞা/বিধি-নিষেধ আছে কিনা বা পরবর্তীতে হবে কিনা, তা চেক করতে হবে।

২৩। বর্তমানে জমির উপর সরকারী কোন প্লান আছে কিনা বা পরবর্তীতে হবে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

২৪। মামলা-মোকাদ্দমা/উকিল নোটিশ আছে কিনা (ভূমি সংক্রান্ত আইনজীবীর নিকট হতে পরামর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে), তা নিশ্চিত হতে হবে ।



২৫। কোন নাবালকের সম্পত্তি কিনা, তা জানতে হবে।

২৬। জমি বিক্রেতা ও বর্তমান জমির দলিলের মালিক একই ব্যক্তি কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

২৭। জমি বিক্রেতার নামে রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল আছে কিনা অথবা জমির বৈধ স্বত্ব আছে কিনা (জমির আসল দলিল দেখে নিতে হবে)।

২৮। উত্তোরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত হলে ওয়ারিশ সনদপত্র নিতে হবে (নিশ্চিত হতে হবে উত্তোরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছে কিনা)।

২৯। উত্তোরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত হলে বন্টন দলিল নিতে হবে (নিশ্চিত হতে হবে উত্তোরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছে কিনা)।

৩০। সহশরিকগণ (আত্মীয়-স্বজন/ আপনজন/ ভাই-বোন) জমিটি কিনতে চায় কিনা?

৩১। সরকারী কোন রাস্তায় পড়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩২। সরকারী খাস/পরিত্যাক্ত/বাজেয়াপ্ত জমি কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩৩। জমি লিজে নেয়া কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩৪। বন্ধক/বর্গা দেয়া আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩৫। ব্যাংক/বীমা/অন্যান্য আর্থিক কোন সংস্থা হতে লোন নেয়া আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩৬। বিক্রেতার জমি বিক্রি করার অধিকার আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

৩৭। অন্য কাউকে বিক্রি করার জন্য পাওয়ার/ আমমোক্তার দেয়া হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

আরো পড়ুনঃ  এসইও কি? সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কি। SEO কেন কিভাবে করবেন 

জমি কেনার পূর্বে প্রয়োজনীয় পেপারস কিভাবে চেক করতে হয়?

"জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়" তা নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্ট। আমরা সবাই জানি, কাগজ-পত্র অর্থাৎ দলিলই হচ্ছে জমির প্রধান। দলিল ছাড়া জমির কোন মূল্য নাই। জমি দলিল করার পূর্বেই প্রয়োজনীয় পেপারস কিভাবে চেক করবেন তা নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করছি সকলেই  উপকৃত হবেনঃ

১। জমির এই পর্যন্ত যতগুলি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে, সবগুলি নিতে হবে। তারপর একজন আইনজীবী এবং লাইসেঞ্ছ প্রাপ্ত দলিল লেখক  দিয়ে চেক করাতে হবে।

২। এই পর্যন্ত যতগুলো দলিল  হয়েছে সবগুলো রেকর্ড অফিসের মাধ্যমে সার্চিং দিতে হবে।

৩। সাব রেজিষ্ট্রি অফিস/এসি ল্যান্ডের অফিস/ স্থানীয় ভূমি অফিস/ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে ভলিয়ম বইয়ের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।

৪। বর্তমানে যে ব্যক্তি জমি বিক্রি করবে তার নামের নামজারির কপি/ খারিজের কপি সংগ্রহ করতে হবে। তারপর মিলিয়ে দেখতে হবে।

৫। ধারাবাহিকভাবে বিগত যতগুলি রেকর্ড অনুযায়ী মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে (কমপক্ষে ২৫ বছরে) সবগুলি মালিকানা দলিল সংগ্রহ করতে হবে।

৬। ১৯০৮ সাল হতে ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সকল বায়া দলিল/ পিট দলিল দাতার নিকট হতে সংগ্রহ করতে হবে। যদি না থাকে তাহলে রেজিষ্ট্রি অফিস হতে সংগ্রহ করতে হবে।

৭। ম্যাপের সাথে মিলিয়ে দেখে জমির অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

৮। সাব রেজিস্ট্রি অফিস/ এসি ল্যান্ডের অফিস/ স্থানীয় ভূমি অফিস/উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ভলিয়ম বইয়ের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে।

৯। জমিটি কি ত্রিভূজ আকৃতি নাকি লম্বা ইত্যাদি তা নকশার সাথে মিলিয়ে নিতে হবে।

১০। দলিল দাতার নিকট হতে সকল পেপার সংগ্রহ করতে হবে (যদি থাকে)।

১১। দলিল দাতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন।

১২। যার নিকট হতে প্রাপ্ত হয়ে মালিক হয়েছেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

১৩। এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের নিকট হতে জানতে হবে জমিটির ইতিহাস (আসল মালিকের বিস্তারিত পরিচয়)।

১৪।  এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের নিকট হতে জানতে হবে জমিটির ইতিহাস (আসল মালিক দখলে আছে কিনা)।

১৫।  রেজিষ্টি অফিসে গিয়ে দলিলের তল্লাশি দিলে জানা যাবে আসল মালিক কে?

১৬। জমি বিক্রয়ের জন্য অ্যাটর্ণি নিয়োগ আছে কিনা যাচাই করা।

১৭। অন্য কোন পক্ষের সাথে বিক্রয় চুক্তি বা বায়না পত্র রেজিস্ট্রি হয়েছে কিনা। 

১৮। এসি ল্যান্ডের অফিসে গিয়ে দলিলের তল্লাশি দিতে পারেন।

১৯। স্থানীয় ভূমি অফিসে/ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে খাজনা রশিদের কপি মিলিয়ে দেখলে জানা যাবে।

২০। রেজিস্টার বা সাব রেজিস্টার অফিসে খোজ নিলেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

২১। কোর্ট সার্স দিয়ে বের করতে হবে। সাধারণত বিগত ২৫ বছরের সার্চ করতে হয়।


আরো পড়ুনঃ সহজে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম - নতুন ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে 

জমি কেনার সময় জমি মালিকের নিকট থেকে কি কি কাগজপত্র নিতে হবে?

জমির মেইন হচ্ছে কাগজ-পত্র অর্থাৎ দলিল। কাগজ-পত্র অর্থাৎ দলিল ছাড়া জমির কোন মূল্য নেই। জমি দলিল করার সময় জমি মালিকের নিকট থেকে নিন্মেবর্ণিত কাগজপত্র নিতে হবেঃ 

💢 জমির সকল ডকুমেন্ট অর্থাৎ কাগজ-পত্র বা দলিল নিতে হবে (মূল কপি হতে ফটোকপি করে নিতে হবে)।

 

💢 জমি বিক্রেতার জাতীয় পরিচয় পত্রের / স্মার্ট আইডির ফটোকপি (মূল কপি হতে ফটোকপি করে নিতে হবে)।

💢 ছবি (সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের কালার)। 

💢 চলতি অর্থ বৎসরের ইনকাম ট্যাক্স জমার সার্টিফিকেট ফটোকপি (মূল কপি হতে ফটোকপি করে নিতে হবে)।

💢 অঙ্গিকারনামা নিতে হবে।

 

জমি দলিল করার সময় কি কি করণীয়?

জমি দলিল করার সময় আপনাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তা না হলে পরবতীতে ঝামেলায় পরতে পারেন। তাইতো আপনি জমি দলিল করার সময় নিন্মেবর্ণিত কাজগুলি করতে পারেনঃ 

💥 জমি দলিল করার পূর্বে একজন ভাল মানের দলিল লেখককে নির্বাচন করতে হবে (অবশ্যই সনদ প্রাপ্ত হতে হবে)।

💥 দলিল লেখার অবশ্যই খসড়া প্রিন্ট করে ভাল করে চেক করতে হবে (সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ এর সাথে সকল দাগ ও খতিয়ান মিল কনফাম করতে হবে)।

💥 দলিল অবশ্যই অনলাইনে করতে হবে। অনলাইনের পাবলিস্ট করে খসড়া প্রিন্ট করে ভাল করে চেক করতে হবে (সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ এর সাথে সকল দাগ ও খতিয়ান মিল কনফাম করতে হবে)। 

💥 নিজ হাতে সকল পে-অর্ডার করতে হবে। এই টাকা অন্য কারও হাতে দিলে টাকা বেশি খরচ হবে, আপনি এটা ধরে রাখতে পারেন।

💥 ঝামেলা এড়াতে দলিল না করা পর্যন্ত জমির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা যাবে না। 

💥 উপস্থিত সকলের সামনে টাকা পরিশোধ করতে হবে।

 আরো পড়ুনঃ বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাস – FIFA World Cup History 

জমি কেনার সময় দলিলের সাক্ষী হিসেবে যাদেরকে রাখতে পারেন।

জমি কেনার সময় দলিলের সাক্ষী হিসেবে নিন্মেবর্ণিত ব্যক্তিদেরকে রাখতে পারেন। তাতে আপনার অনেক উপকার হবে এবং আপনার জমি কেনার বা দলিলের পক্ষে অনেক ভাল হবে বলে আমি মনে করছিঃ

👫জমি দলিল করার সময় অবশ্যই ৩-৪ জন দলিল দাতার একেবারে নিকটের আত্মীয়-সজন (সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, মামা, খালু, চাচা ইত্যাদি) সাক্ষী রাখতে ভুল করবেন না। 

👫জমি দলিল করার সময় অবশ্যই দলিল দাতার একেবারে নিকটের আত্মীয় সজন (সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, মামা, খালু, চাচা ইত্যাদি) ১ নাম্বার সাক্ষী রাখতে হবে। 

👫জমি দলিল করার সময় অবশ্যই দলিল দাতার এলাকার পরিচিত বা গণ্যমান্য ব্যক্তিকে ২ নাম্বার সাক্ষী রাখতে হবে।   

👫জমি দলিল করার সময় জমি যার মাধ্যমে কেনা হয়েছে তাকে ৩ নাম্বার সাক্ষী রাখতে হবে।  

👫জমি দলিল করার সময় অবশ্যই দলিল দাতার একেবারে নিকটের আত্মীয় সজন (সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, মামা, খালু, চাচা ইত্যাদি) জামিন দাতা হওয়া ভাল। 


জমি কেনার পর কি কি করণীয়? 

জমি ক্রয়ের আগে যেমন কিছু করণীয় আছে, ঠিক তেমনি জমি কেনার পরও বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। তা পালন করা উচিত বলে আমি মনে করছি। জমি ক্রয় করার পর পরই বা যে কোন দলিলের মাধ্যমে জমি বা উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত জমি কাজ কিন্ত শেষ হয়ে যায় না। জমি কেনার পরে অথবা মালিকানা অর্জন করার পর কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। তা না হলে আপনাকে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। আসুন জেনে নেয়া যাক, জমি কেনার পর আপনি কি কি কাজগুলি করতে পারেনঃ

✋ ফাইনাল দলিল করার পূর্বে খড়সা প্রিন্ট করে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ এর রেকর্ড অনুযায়ী সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা চেক করতে পারেন। 

✋ ফাইনাল দলিল করার পূর্বে খড়সা প্রিন্ট করে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সিটি জরিপ এর সাথে সকল দাগ ও খতিয়ান মিলিয়ে দেখে সঠিকতা নিশ্চিত করতে পারেন।

✋  জমি রেজিস্ট্রেশন করার সময় অবশ্যই একজন সনদ প্রাপ্ত লেখক দিয়ে দলিল লেখার কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতে হবে।

✋ জমি সরকারি আমিন দিয়ে মেপে বুঝে নিতে হবে (জমি পরিমাপ করে চৌহদ্দি বুঝে নিতে হবে)।

✋খারিজ/মিউটেশন/নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে। 

 



✋ অবশ্যই আপনাকে দখলে যেতে  হবে (যেমন- যে কোন ধরণের চাষাবাদ, গাছ-পালা রোপন, ঘর-বাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি করে নিজের দখল প্রতিষ্ঠা করা)।

✋  ক্রয়সুত্রে মালিক লিখে সাইন বোর্ড দিতে পারেন। 

✋ রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মূল দলিল পেতে দেরি হলে নকল বা সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে হবে। 

✋ মূল মালিক মারা গেলে ওয়ারিশগণ বন্টননামা করে নামজারী নিশ্চিত করুন। 

✋ কৃষি জমি হলে নিজে আবাদ করা বা নিজের লোক দিয়ে আবাদ করানো যেতে পারে।

✋ আপনি চাইলে চারদিকে ওয়াল দিতে পারেন এবং গাছ লাগাতে পারেন।

 ✋ নামজারি হয়ে গেলে নিজ নামে খাজনা দিতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ সাইবার অপরাধে করণীয় কি 

কেন জমি খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করা জরুরী?

জমির মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার প্রথম ধাপই হচ্ছে দলিল রেজিস্ট্রি করে নেওয়া এবং দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করা। যদি আপনি কোন জমি ক্রয় করে থাকেন, তাহলে সেই জমির খাজনা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রেই জমি খারিজ করা জরুরী। জমি দলিল করার পর মৌজায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে আপনার নামের জমির মালিকানা গ্রহণ করতে পারেন।  

আপনি যদি আপনার জমি খারিজ/মিউটেশন/নামজারি না করেন তাহলে আপনি এই জমি কখনোই পরবর্তীতে বিক্রয় করতে পারবেন না এবং যে কোনো সময় পূর্বের মালিক আপনার জমি মালিক বা দখলদার হিসেবে দাবী করতে পারবেন। এতে করে পরবর্তীতে অনেকটা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ জমির নামজারি বা খারিজ করা না থাকলে আপনি সেই জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। তাই জমির ক্রয় করার পরেই অবশ্যই তাড়াতাড়ি জমি খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করে নিতে হবে। 


অনলাইনে খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করতে কি কি লাগে? 

অনলাইনে খারিজ/মিউটেশন/নামজারির আবেদনের ক্ষেত্রে নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি করা দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। একই সঙ্গে মূল দলিলের ফটোকপি, ভায়া দলিলের ফটোকপি, পরচা বা খতিয়ানের ফটোকপি, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ফটোকপি, ওয়ারিশান সনদপত্র (অবশ্যই সনদপত্র তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা হতে হবে) (যদি প্রয়োজন হয়), বণ্টননামা দলিল (যদি প্রয়োজন হয়) ইত্যাদি সাথে দিতে হবে। 

এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট যে কোন কাগজপত্র বা দলিল সাব-রেজিস্টার চাইতে পারে, তা দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তির ক্ষেত্রে স্ক্যান ফাইলটি অবশ্যই PDF ফরমেটে আপলোড করতে হবে। PDF ফাইল সাইজ অবশ্যই সর্বোচ্চ ১ পেজ ১.২৫MB এবং মোট ২৫ MB এর মধ্যে হতে হবে।



খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করতে কত দিন সময় প্রয়োজন?

বর্তমানে খারিজ/মিউটেশন/নামজারি নিষ্পত্তি করতে মাত্র ২৮ দিন সময় এর প্রয়োজন হয়। আমরা সবাই জানি, জমির কাগজপত্রে একটু প্যাচগোজ বা ঝামেলা থাকলে অনলাইনে মিউটেশন/নামজারি সম্পন্ন হয় না। ত্রুটিমুক্ত দলিল বা কাগজপত্রাদি অনলাইনে দাখিলের মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই নামজারি বা মিউটেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। এ প্রেক্ষিতে আপনাকে নামজারি করা জন্য আবেদন করা জমিটি আপনি নিলাম, বন্দোবস্ত, ক্রয়সূত্রে, ওয়ারিশসূত্রে, হেবা, অন্যান্য কি সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছেন তা চিহ্নিত করতে হবে। অনলাইনে আবেদনের সম্পন্ন করার পর একটি আইডি নম্বর পাওয়া যায়। আবেদনের আইডি নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে আবেদনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। 

খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করতে কত টাকা লাগবে?

কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে খারিজ/মিউটেশন/নামজারি করতে কত টাকা লাগে। তবে তা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। খারিজ/মিউটেশন/নামজারির জন্য অনলাইনে ফি প্রদান করতে হয় মাত্র ১,০০০.০০ (এক হাজার) টাকা থেকে শুরু করে ১,১৭০.০০ (এক হাজার একশত সত্তর) টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আবেদন দাখিলের সময় আবেদন ফি শুধুমাত্র অনলাইনের মাধ্যমে নগদ, রকেট, বিকাশ, উপায়, ভিসা কার্ড, মাস্টার্ড কার্ড ইতাদির মাধ্যমে লেনদেন করার সুযোগ রয়েছে। ৭০.০০ (সত্তর) টাকা (আবেদন ফি, কোর্ট ফি বাবদ ২০.০০ (বিশ) টাকা, নোটিশ জারি ফি বাবদ ৫০.০০ (পঞ্চাশ) টাকা এবং রেকর্ড সংশোধন ফি ১.০০০.০০ (এক হাজার) টাকা অর্থাৎ নামজারির পুরো ফি ১,১৭০.০০ (এক হাজার একশত সত্তর) টাকা। যা অনলাইনে পরিশোধ করতে পারবেন। 


শেষকথাঃ জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়?

কথায় আছে, "জমি তুমি কার? উত্তরে জমি বলে, কাগজ যার আমি তার"। তাই সবারই উচিত হবে জমি কেনার পূর্বে জমি সংক্রান্ত অভিজ্ঞ একজন অ্যাডভোকেট কর্তৃক সবকিছু দেখে শুনে, কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই করে, তারপরে জমি কিনতে হবে। অন্যথায় আপনি কিন্তু পস্তাবেন, কথাটি মনে রাখতে হবে। জমির মেইনই হচ্ছে কাগজ-পত্র অর্থাৎ দলিল। কাগজ-পত্র অর্থাৎ দলিল ছাড়া জমির কোন মূল্য নাই। কোন অবস্থাতেই অসম্পন্ন বা ঘারতি কাগজ-পত্র অর্থাৎ দলিল নিয়ে জমি কেনা যাবে না।

জমি ক্রয় করার আগে কিছু করণীয় ভুলের কারণে অনেকেই হয়রানির শিকার হন। জমি ক্রয় করতে আপনাকে সতর্ক এবং সঠিক উপায় অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে যে কোন সমস্যায়  পরতে পারেন। আশা করছি "জমি কেনার পূর্বে কি কি পেপারস চেক করতে হয়" তা জানতে পেরেছেন। এই সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 





ইতিমধ্যে হয়তো আপনারা আমার সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে নিয়েছেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকে আপনারা আপনাদের অনুসন্ধান করা তথ্য জানতে পেরেছেন। যদি এই পোস্ট থেকে আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার আশেপাশের ব্যক্তিদেরকে জানিয়ে দিন। আপনাদের যে কোন কমেন্ট অনুযায়ী আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করব ইনশাল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url