রমজানের পূর্ব প্রস্ততি - রমজানের প্রস্ততি যেভাবে নেবেন

আমাদের রমজানের পূর্ব প্রস্ততি নেওয়াটা অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ন, কেননা রমজান মাস এমন একটি পবিত্র মাস,যার তাৎপর্য ইসলামে অনেক মুল্যবান ভুমিকা পালন করে। অনেকেই আছেন যাদের কোন ধারনা নেই যে, রমজানের জন্য কিভাবে প্রস্তত হতে হয়। 

রমজানের পূর্ব প্রস্ততি নেওয়াটা অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ন, কেননা রমজান মাস এমন একটি পবিত্র মাস

আজ আমাদের আর্টিকেলটি তাদের জন্য যারা অধির আগ্রহে রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তত করতে চান। তাছারা, আজ আপনারা জানতে পারবেন রমজানের পূর্ব প্রস্ততি কেন করবেন,রমজানের প্রস্ততি রজব থেকেই কেন এবং রমজানের আদব কি কি।     

সূচিপত্রঃ রমজানের পূর্ব প্রস্ততি - রমজানের প্রস্ততি যেভাবে নেবেন

রমজানের পূর্ব প্রস্ততি কেন করবেন?

রমজানের পূর্ব প্রস্ততির মাস হচ্ছে শাবান মাস। শাবান মাসে শবে বরাত পালন করা হয় ৩ টি নফল রোজা রাখার মাধ্যমে। রমজানের পূর্ব প্রস্ততি কেন করবেন? তা আজ আপনা আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আজানের সাথে সাথে যেমন আমরা নামাজের জন্য প্রস্ততি হয়ে।

ঠিক তেমনি শাবান মাসের চাঁদ দেখার সাথে সাথে আমাদের রমজানের পূর্ব প্রস্ততি নেওয়ার হুকুম রয়েছে। রমজান মাসকে মর্যাদাশীল এবং বরকতপূর্ণ মাস হিসেবে আমরা জানি। তাই রমজান মাসের প্রস্তুতি আমাদের আগে থেকে নিয়ে‌ পরিকল্পনা অনুযায়ী পবিত্র রমজান পালন করা উচিত।

রমজান মাস রহমতের মাস, এই মাসে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সকল রহমতের দরজা খুলে দেন। এই মাস বাকি ১১ টি মাসের মধ্যে  অধিক তাৎপর্য বহন করে। তাই রমজানের পূর্বে প্রস্ততি নেওয়া প্রতিটি মুসলমাদের জন্য বঞ্চনীয়।

রমজানের প্রস্ততি রজব থেকেই কেন? 

রমজানের পূর্ব প্রস্ততি শুরু হয়ে যায় রমজান মাসের চাঁদ দেখার আগে থেকেই। অনেকেই হয়ত জানেনা রমজানের প্রস্ততি রজব থেকেই কেন হয়, আরবী মাসের ৪ টি তাৎপর্য পূর্ন মাসের মধ্যে রজব মাস অন্যতম বরকতময় একটি মাস। 

রজব মাসের ২৭ তারিখে পালিত হয় শবে মেরাজ। শবে মেরাজ কি? তা আমরা আমদের পূর্ববর্তী আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানিয়েছি। যদি আপনারা রমজানের রহমত পেতে চান তবে রজবের শুরু থেকেই সকল প্রকার পাপ কাজ এবং হারাম অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য চেষ্টা করা শুরু করুন।            

হাদিসে এসেছে, মহানবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান।’ অর্থঃ হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত ও রহমত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। (মুসনাদে আহমদঃ১/৩৩৯)

রমজানের প্রস্ততি রজব থেকেই কেন তা উক্ত হাদিস হতে বুঝা যায়, রজব এবং শাবান মাসের ইবাদত আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক প্রিয় এবং বরকতময়।  

রমজানের আদব কি কি?

রমজানের আদব কি কি? তা সম্পর্কে ধারনা রাখা রমজানের পূর্ব প্রস্ততি এরই একটি অংশ। রমজানের আদব গুলো জানা থাকলে আপনারা রমজান মাসটি আরো উৎসাহ ও নিষ্ঠার সাথে রোজা রেখে পালন করতে পারবেন,আসুন জেনে নিন রমজানের কিছু আদব।

আদব কায়দা মানুষের জীবনকে সুন্দর করতে সাহায্য করে। রমজানের আদব বলতে এখানে বোঝানো হয়েছে যে সকল কাজ কর্ম দ্বারা আমরা রমজান মাসকে আরো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে পালন করতে পারি এবং রমজান মাসের প্রতিটি ইবাদত অন্তর থেকে আমরা একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যই করতে পারি,সে সকল কাজ গুলোকে নিজেদের অভ্যাস বানানোই হচ্ছে রমজানের আদব।

রমজানের প্রস্ততি যেভাবে নেবেন- যখন আপনি রমজান মাসের চাঁদ দেখে নিবেন,ঠিক তখন থেকে আপনি প্রতিদিন ২১ বার সূরা কদর তেলওয়াত করা শুরু করে দিবেন। কেননা ২১ বার সূরা কদর পাঠকারীকে আল্লাহ তায়ালা এমন ভাবে রিজিক দেন,যেমন ভাবে উপর থেকে পানি নিচে গড়িয়ে আসে।

মাহে রমজানের ১৯ টি পূর্ব প্রস্ততি। রমজানের প্রস্ততি যেভাবে নেবেন! 

রমজান মাস হিদায়াতের মাস, সুরা বাকারার ১৮৫ আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,"রমজান মাসই হচ্ছে সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন যা মানুষের জন্য হিদায়াত। 

তাছারা,"রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই যদি আল্লাহর কোনো বান্দা যে কোনো ভালো কাজ বা আমল যদি উত্তম উপায়ে করে,তাহলে সে আমল বা কাজ আল্লাহ তাআলার কাছে পছন্দীয় হিসেবে গ্রহণ হয়।"-তাবারানি

অনেকেই চিন্তায় পরে যান যে কিভাবে রমজানের পূর্ব প্রস্ততি নিবেন, অথবা কোন কাজ গুলোকে আপনি রমজান মাসের প্রতিদিনের তালিকায় রাখবেন। আসুন ড্রিম আইটিসির মাধ্যমে জেনে নিন আপনি রমজানের প্রস্ততি যেভাবে নেবেন, নিম্নে আপনার সুবিদার্থে কয়েকটি রমজানের আদব দেওয়া হলো- 

মাহে রমজানের ১৯ টি পূর্ব প্রস্ততি ও রমজানের আদব

মাহে রমজানের পূর্ব প্রস্ততি-

  • রমজানের উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা রাখা। 
  • রমজানের মাসালা গুলোকে পুনরায় মনের করা। 
  • যত সম্ভব দান সদকা করা। 
  • যেসব কারণে রোজা ভাঙতে পারে তা পরিহার করা।
  • সঠিক সময় নামাজ আদায় করা। 

রমজানের আদব-

  • প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করা।
  • প্রতি ওয়াক্তের নামাজে দোয়া করা। 
  • অধিক পরিমানে তওবা ও ইস্তেগফার পাঠ করা। 
  • পরনিন্দা পরিহার করা।
  • চরিত্র ঠিক রাখা।
  • রাগ নিয়ন্ত্রণ করা। 
  • সকল সুন্নত পালন করার চেষ্টা করা। 
  • বেশি বেশি জিকির করা। 
  • দেরি করে সেহরি খাওয়া। 
  • সেহরির সময় কে সুযোগ মনে করে দোয়া করা।
  • কোন কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করা যাবে না। 
  • ইফতারে আগে দোয়া করা। 
  • ইফতারে কম খাওয়া ।
  • সমার্থ থাকলে গরিবদের কে খাবার দান করা। 

রমজানের পূর্ব প্রস্ততি - রমজানের প্রস্ততি যেভাবে নেবেন

রমজানে শরীরকে কীভাবে প্রস্তুত করা যায়? 

রমজানে রোজা রাখা একটি শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম।  যদিও আমরা আমাদের মন এবং শরীরকে কীভাবে প্রস্তুত করব সে সম্পর্কে আমরা ভিন্ন হতে পারি, এখানে কিছু উপায় রয়েছে যা আপনাদের প্রতিদিন রোজা রাখার জন্য সামঞ্জস্য করতে সাহায্য করতে পারে-

শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে 

সারা রাত ধরে বেশ কয়েকবার পানি বা সরবত পান করার চেষ্টা করুন। যদিও আপনি খুব বেশি তৃষ্ণার্ত না হন । পানির তৃষ্ণা একটি সংকেত যে আপনার শরীর ইতিমধ্যেই ডিহাইড্রেটেড বা পানি শূন্য। ক্যাফেইন নেই এমন তরল বেছে নিন, কারণ ক্যাফিনযুক্ত পানীয় আপনাকে ডিহাইড্রেট করতে পারে। আপনার মনে রাখা দরকার যে, ইফতারে পানি দিয়ে আপনার রোজা খুলবেন। 

বিভিন্ন ধরনের খাবার খান

আপনি সন্ধ্যার সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারেন। কারন আগের চেয়ে অনেক বেশি রোজার চাপের ক্ষতিপূরণের জন্য আপনার শরীরের ভাল পুষ্টি প্রয়োজন হবে। পুরো শস্য, শাকসবজি, ফল, চর্বিহীন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন; জলপাই তেল এবং বাদামের মতো এই সবগুলো খাবার আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

খাবারের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ

খাবারের পরিমাণটি খাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল তা ধরতে শরীরের প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে।  তাই আপনারা ইফতারের সময় খাওয়া নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। মনযোগ সহকারে খাওয়া এবং আপনার ক্ষুধা মেটলে আপনার শরীরের উপর কম চাপ সৃষ্টি করে এবং আপনাকে একবারে প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার চেয়ে বেশি শক্তি দেয়।

নরাচরা করবেন

যদিও রোজা শারীরিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে, তবে সম্পূর্ণভাবে বসে না থাকার চেষ্টা করুন।  আপনি যদি সকালে ব্যায়াম করেন, তাহলে দেখুন আপনার শরীর কেমন অনুভব করে যদি আপনি আপনার রোজার পরে সন্ধ্যায় ব্যায়াম পরিবর্তন করেন।আপনাদের জন্য  দিনের বেলা কঠোর ব্যায়াম একটি ভাল ধারণা নয় কারণ আপনি দ্রুত পানিশূন্য হতে পারেন।  এর পরির্বতে অল্প হাঁটা বা কাজ করা দিনের বেলা আপনার শক্তি ধরে রাখতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।

একটি সুষম সেহরির 

একসাথে একটি সুষম খাবারের উপাদানগুলো আপনার রক্তে শর্করাকে সবচেয়ে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, যা আপনাকে ভাল শক্তি দিতে পারে। আপনার সেহরিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু উপাদানদেওয়া হলো-
  • গোটা শস্য; যার মধ্যে রয়েছে পুরো শস্যের রুটি, বাদামী চাল এবং ওটমিল।
  • তাজা ফল এবং শাকসবজি
  • প্রোটিন উপাদানের মধ্যে রয়েছে দুধ, দই, ডিম, বাদাম।
  • স্বাস্থ্যকর চর্বি-উৎস হল বাদাম এবং জলপাই।
সেহরির সময় পানি পান করার পাশাপাশি এই খাদ্যের সাথে পানীয় খেতে পারেন-
  • কম চর্বিযুক্ত দুধ দিয়ে তৈরি ওটমিল এবং ফল এবং বাদাম দিয়ে।
  • এক বাটি পুরো-শস্যের সিরিয়াল এবং কম চর্বিযুক্ত দুধ, ফল এবং বাদাম দিয়ে।
  • এক টুকরো পুরো-শস্য টোস্ট, একটি সিদ্ধ ডিম এবং এক টুকরো ফল।
  • পুরো শস্যের রুটিতে একটি চিনাবাদাম মাখন স্যান্ডউইচ এবং এক গ্লাস কম চর্বিযুক্ত দুধ।
  • চিনাবাদাম মাখনের সাথে একটি কলা বা আপেল এবং এক গ্লাস কম চর্বিযুক্ত দুধ।
  • এক বাটি সবজি স্যুপ, এক টুকরো পুরো শস্য টোস্ট এবং এক গ্লাস কম চর্বিযুক্ত দুধ।

শেষকথাঃরমজানের পূর্ব প্রস্ততি - রমজানের প্রস্ততি যেভাবে নেবেন

রমজান মাস যে রহমত ও বরকতের মাস তা আমাদের কারো কাছেই অজানা না। আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিমকে রমজানের পূর্ব প্রস্ততি গ্রহণ করতে রজব ও শাবান মাসে নফল রোজা-নফল নামাজ,কুরআন তিলাওয়াত,জিকির,তাওবা-ইস্তিগফারের অভ্যাস তৈরি করার তাওফিক দান করুন(আমিন)।

রমজানের মাসের ফজিলত সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লেগে থাকলে সবার সাথে শেয়ার করতে ভুলেন না। 🥰 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url