রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব - রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ ইমান,সালাত,রোজা,হজ্ব ও যাকাতের মধ্যে রোজা হচ্ছে চথুর্ত স্তম্ভ।এই পাঁচটি ইবাদত প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য বা ফরজ করা হয়েছে। একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দ্যেশেই আমরা আল্লাহর ইবাদত ও অনুগ্যত প্রকাশ করি।

যে মাসে ফরজ রোজা পালন করা হয়,তাকে রমজান মাস বলে।এ মাস ধৈর্যের মাস।আর ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত

আরবী মাসের নবম-তম মাস হচ্ছে রমজান মাস। রমজান মাসের ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ। মাহে রমজান পিকচার।

পেইজ সূচিপত্রঃ রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব - রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রোজা কি? রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রোজার আরবী শব্দ হচ্ছে "সাওম" যার অভিধানীক অর্থ হলো;বিরত থাকা,আত্মসংযম।একে বহুবচনে সিয়াম বলে।সাওমকে ফারসি ভাষায় রোযা বলা হয়।আবার শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লহ্ম্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যস্ত পর্যন্ত নিয়তের সাথে পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে রোজা বা সাওয়াম বলে।
যে মাসে ফরজ রোজা পালন করা হয়,তাকে রমজান মাস বলে। এ মাস ধৈর্যের মাস,আর ধৈর্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। এ মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়।যে ব্যাক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে ইফতার করাবে,সে তার রোজার সমান সাওয়াব পাবে,অন্যদিকে রোজা পালনকারী ব্যাক্তির সাওয়াবে বিন্দুমাত্র ঘাটতি হবে না। আহলান সাহলান মাহে রমজান।

রমজান অর্থ কি? রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলা উচ্চারণে এটি হয় রমজান। রমাদান ( رَمَضَان) বা রমজান শব্দের অর্থ হলো প্রচণ্ড গরম, সূর্যের খরতাপে পাথর উত্তপ্ত হওয়া, সূর্যতাপে উত্তপ্ত বালু বা মরুভূমি, মাটির তাপে পায়ে ফোসকা পড়ে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, ঝলসে যাওয়া, ঘাম ঝরানো, চর্বি গলানো, জ্বর, তাপ ইত্যাদি।

রমজানের রোজার ইতিহাসঃ রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই রোজা চলে আসছে। আদম (আঃ) এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আঃ)কে জান্নাতে বসবাস করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাকো এবং সেখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাকো কিন্তু তোমরা এ গাছের কাছে যেও না, তাহলে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত- ৩৫)

মুফাসসিরিনদের মতে এই যে নির্দিষ্ট একটি গাছের ফল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খেতে নিষেধ করা হয়েছিল, এটাই ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম রোজা। সুনানু ইবন মাজাহ-এর থেকে জানা যায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, নূহ (আঃ) ১ শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ব্যতীত সারা বছর নফল রোজা রাখতেন। 

সেসময় রোজা রাখা আমাদের সময়ের মতো ছিল না। রোজার ধরন, কোন কোন বিষয় থেকে বিরত থাকতে হবে, কতক্ষণ সময় বিরত থাকতে হবে, এ বিষয়গুলো ভিন্ন ভিন্ন ছিল। খোশ আমদেদ মাহে রমজান।

এই মাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি হল: রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

  • ২ রমজান - ঈসা (আঃ) তাওরাত প্রাপ্ত হন।
  • ১০ রমজান - মুহাম্মাদ এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ মৃত্যুবরণ করেন।
  • ২০ রমজান - মুহাম্মাদ (সাঃ) মক্কা বিজয় করেন।
মাসটির শেষ দশ দিনে (সাধারণত বিজোড় রাতে) লাইলাতুল কদর পালন করা হয়। মুসলমানরা এই রাত্রিকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত্রি বলে বিশ্বাস করেন। হাদীসে লাইলাতুল কদরের ইবাদতের দ্বারা এক হাজার মাস (৮৩ বছর চার মাস) এর ইবাদতের সমপরিমান ছওয়াব পাওয়ার কথা বলা হয়েছ।

রমজান মাসের গুরুত্ব। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

ইসলামের প্রধান পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা বা সাওম অন্যতম। মৌলিক ইবাদতগুলোর মধ্যে ইমান ও সালাতের পরেই সাওমা বা রোজার স্থান। রমজান মাসে রোজা পালন করা সকল মুসলমানদের উপর ফরজ। যে তা অস্বীকার করবে সে কাফির হবে।

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াত অবতীর্ণের মাধ্যমে মুসলিম জাতির উপর রোজা ফরজ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, -

"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো।"

হিজরী শাবান মাসের ১০ তারিখে এই আয়াতটি আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় রাসূল (সাঃ) এর উপর নাযিল করেন এবং মুসলমানদের উপর রোজা ফরজ হয়। মহানবীর নির্দেশ মতে ইসলামের এই ফরজ রোজা, রমজান মাসে পালিত হয়ে থাকে। মাহে রমজান ছবি।

রোজা পালন করলে মানুষ পরস্পর সহানুভূতিশীল হয়।ধনীরা গরীবদের অনাহারে,অর্ধহারে জীবনযাপনের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে।ফলে তারা দান-খয়রাতে উৎসাহিত হয়।রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ হিংসা,বিদ্বেষ,পরনিন্দা,ধূমপান আসক্তি ইত্যাদি বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে।হাদিসে বর্ণিত আছে-

"রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ।" রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস হতে পাই,"কূপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আত্মরাহ্মার হাতিয়ার হলো রোজা। রোজা পালনের মাধ্যমে পানাহারে নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে ওঠে।এতে অনেক রোগ দূর হয়,স্বাস্থ্য ভালো থাকে।


রমজানের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-"রমজান মাস,এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরুপে কুরাআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে।"-(সূরা আল-বাকারা,আয়াত ১৮৫)

এই আয়াত দারা প্রমানিত যে,আল-কুরাআন রমজান মাসেই নাজিল হয়েছে বলে এটি অতি পবিত্র মাস।হাদিসে কুদসিতে আছে-

"রোজা কেবল আমারই জন্য।আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।"(বুখারী)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,"জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে।কিয়ামতের দিন রোজা পালনকারী ব্যতীত অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না।" (বুখারী)

রাসুলুল্লাহ(সাঃ) আরো বলেন,"যা ব্যাক্তি ইমানের সাথে এবং আখেরাতের সাওয়াবের আশায় রোজা পালন করে, তার অতিত জীবনের সকল(সগিরা)গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"(বুখারী ও মুসলিম)

রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত হচ্ছে;

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

আরবি নিয়তঃ নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

বাংলায় নিয়তঃ  হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

ইফতারের দোয়া। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত আছে, ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া পড়ে ইফতার করা;

اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن

উচ্চারণঃ "আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।"

অর্থঃ"হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।"

ইফতারের পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে এই দোয়া পড়া;

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর(রাঃ)থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-

ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ

উচ্চারণঃ "জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।"

অর্থঃ"(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো "(আবু দাউদ, মিশকাত)

রমজান মাসের ফজিলত ও আমল। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রমজানের ফজিলত এর দিক দিয়ে রমজান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন রহমতের,দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়ার।

রোজা রাখাঃ রমজান মাসে একজন মুমিন যে সকল ইবাদত করে তার মধ্যে অন্যতম ইবাদত হলো রমজানের রোজা রাখা। এর মাধ্যমে সে যেমনিভাবে তার উপর ফরজ বিধান পালন করে তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলার নিকট তার জন্য রয়েছে অসংখ্য প্রতিদান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিদান হলো; রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজেই দেন এবং তার জন্য রয়েছে জান্নাতের বিশেষ স্থান এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্তির ঘোষণা।

বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করাঃরমজান মাসের একটি বিশেষ আমল হলো; কোরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ(সাঃ)অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে অধিক পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন । একটি হাদীস শরীফে এসেছে-

كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلام يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَلِخَ يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْقُرْآنَ فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلام كَانَ أَجْوَدَ بِالْخَيْرِ مِنْ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ

ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,তিনি বলেন, মহানবী (সাঃ) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরাঈল (আঃ) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। আর মহানবী (সাঃ) তাঁকে কুরাআন শোনাতেন। জিবরাঈল (আঃ) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং-১৯০২)


বেশি বেশি দান-সদকা করাঃ মানুষকে সম্পদ দান করা বা সম্পদ সদকা করা আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি বিশেষ আমল। উপরল্লেখিত হাদিস এবং অন্যান্য হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় যে প্রিয় নবী(সাঃ) রমজান মাসে বেশি বেশি দান করতেন।

এছাড়াও সদকার ফজিলতের বিষয়ে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রিয় নবী(সাঃ)এর উপর সর্বপ্রথম কুরআন অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর স্ত্রী খাদীজা বিনতে খুওয়ায়লিদের নিকট এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর; ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর’। তিঁনি তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন। এমনকি তাঁর শংকা দূর হলো। 

তখন তিনি খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি আমার নিজেকে নিয়ে শংকা বোধ করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। কেনোনা-

وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ‏.‏

আপনি তো আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্য করেন।(সহিহ বুখারী হাদিস নং ৩)

চারটি কাজ বেশি বেশি করা। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

১)কালিমা পড়া।

২) ইসতেগফার করা।

৩) জান্নাত প্রাপ্তির দোয়া করা।

৪) জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা।

একটা হাদিসে প্রিয়নবী (সাঃ)ইরশাদ করেনঃ

استكثروا فيه أربعة خصال خصلتين ترضون بهما ربكم وخصلتين لا عناء بكم عنهما فأنا الخصلتان اللتان ترضون بهما ربكم فشهادة ان لا الهم الا الله و تستغفرونه فأما الخصلتان اللتان لا غناء بكم عنهما فتسئلون الجنة و تعوذون به من النار

তোমারা রমজান মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করো।তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন যা করলে তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন । আর অপর দুটি কাজ হলো এমন যা না করে উপায় নেই। যে দুটি কাজে তোমাদের প্রতিপালক খুশি হন তাহলো কালিমা তাইয়্যেবা পাঠ করা ও ইসতেগফার করা। আর যে দুটি কাজ না করে উপায় নেই তাহলো তোমারা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা কর। (সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ১৮৮৭)

তারাবীহ নামায পড়া ও রাত্রি জাগরণ করা। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

من صامه وقامه ايمانا واحتسابا خرج من الذنوب كيوم ولدته امه

যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং (ইবাদাতে) রাত্রি জাগরন করবে সে ভূমিষ্ঠ শিশুর নয় যাবতীয় গুনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।(সহিহ ইবনে খুযাইমা হাদিস ২২০১, মুসনাদে আবু ইয়ালা হাদিস নং ৮৬৩)

সেহেরি খাওয়াঃ যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সেহেরি অন্যান্য খাবারের মতই মনে হয়,কিন্তু তা সত্ত্বেও তাতে রয়েছে বিশেষ বরকত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু (সাঃ)ইরশাদ করেন-

تسحروا فإن في السحور بركة

"তোমারা সেহেরী খাও কেনোনা তাতে বরকত রয়েছে।"

(সহি বুখারি হাদিস নং ১৯২৩ সহিঃ মুসলিম হাদিস নং ১০৯৫)

অপর হাদিছে প্রিয়নবী(সাঃ) বলেনঃ

فصل ما بين صيامنا وصيام أهل الكتاب اكلة السحور

"আমাদের এবং আহলে-কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সেহরি খাওয়া। অর্থাৎ আমরা রোজা রাখার জন্য সেহরি খাই আর আহলে-কিতাবিরা রোজা রাখার জন্য সেহরি খায় না।"

(সহিঃ মুসলিম হাদিস নং ১০৯৬)

অপর হাদিছে প্রিয় নবী (সাঃ) এরশাদ করেনঃ

إن الله و ملائكته يصلون على المسحرين

"নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ যারা সেহরী খায় তাদের জন্য রহমত বর্ষণ করেন।"

(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৩৪৬৭)

যেহেতু সেহরি খাওয়াতে বরকত রয়েছে এবং আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিস্টানদের রোজার থেকে মুসলমানের রোজা পার্থক্য সৃষ্টি হয় এবং সর্বোপরি যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসের উপর আমল হয়ে যায় এজন্য ওলামা একরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে প্রত্যেক রোজাদারের যত্নবান হওয়া উচিত। (আল মিনহাজ খন্ড ৭পৃষ্ঠা ১৫৫‌ ফাতহুল বারী খন্ড ৪পৃষ্ঠা ১৬৭)

রোজাদারকে ইফতারী করানোঃ 

ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবারের ব্যবস্থা করা আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি প্রিয় ইবাদত।প্রিয় নবী(সাঃ) এরশাদ করেন-

ان في الجنه غرفه يرى ظاهرها من باطنها و باطنها من ظاهرها أعدها الله تعالى من اطعمة الطعام و الان الكلام

"নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন একটি আবাসস্থল রয়েছে (তাই এতই স্বচ্ছ যে) বাহির থেকে ভিতরে এবং ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যাবে ।আল্লাহ তায়ালা উত্তর জান্নাত তৈরি করেছেন এমন মানুষের জন্য যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায় এবং নরম ভাষায় কথা বলে।" (মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ৬৬১৫,২২৯০৫)


যদি তা হয় কোন রোজাদারের ইফতারি করানো তাহলে তার সাওয়াব ও ফযিলত আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রিয়নবী (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ

من فطر صائما كتب له مثل أجرة لا ينقض من أجرة شيئ

"যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতারী করবে সে ঐ রোজাদারের সমপ্রতিদান প্রাপ্ত হবে।তবে একারনে রোজাদারের প্রতিদান কমোনো হবে না।"

(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৩৪২৯,সহিহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ৪৬৩২,সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ৩৩১৭,৩৩১৮, সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ৮০৭,মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৭০৪৪,মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদিস নং ১৯৫৫৫,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস নং ৭৯০৫-৭৯০৬)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে;

من فطر صائما كان مغفرة لذنوبه و عتق رقبته من النار وكان له مثل أجره من غير أن ينقض من أجره شيئ قالوا ليس كلنا نجد ما يفطر الصائم فقال يعطي الله هذا الثواب من فطر صائما على تمرة او شربة ماء او مذقة لبن

"যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতারী করাবে তা তার জন্য গোনাহ আমাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম হবে। এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব হবে। তবে এ কারণে রোজাদারের প্রতিদান সামান্য পরিমাণ কমানো হবে না । 

সাহাবায়ে কেরাম বললেন হে নবী,আমাদের অনেকেই তো রোজাদারকে পেট ভরে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখে না। তখন নবী করীম (সাঃ) বললেন (এ প্রতিদান পাওয়ার জন্য রোজাদারকে পেট ভরে ইফতার করানো জরুরি নয়)। বরং যে ব্যক্তি একটু খেজুর বা একটু পানি বা সামান্য দুধ পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এই বিরাট প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।" (সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ১৮৮৭)
উক্ত হাদীসের শেষ অংশে প্রিয়নবী (সাঃ) এরশাদ করেন-

من سقى صائما سقاه الله من حوضي شربة لا يظمأ حتى يدخل الجنة

"যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পানি পান করাবে আল্লাহ তাকে হাউজে কাউসার থেকে পান করাবেন প্রবেশ করার পূর্বে তার আর পিপাসা লাগবেনা।" (সহীহ ইবনে খুযাইমা হাদিস নং ১৮৮৭)

রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করাঃ প্রিয়নবী (সাঃ)-যে সকল আমল নিয়মিত করতেন সাধারনত ছাড়তেন না এর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হলো রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা ।উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে,

أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ

عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ ‏

"(নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত রমাযানের শেষ দশকেই ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর সমধর্মিনীগণও ই‘তিকাফ করতেন।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৭৪ সহি বুখারী হাদিস ২০৪১)
অপর এক হাদীসে এসেছ

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ ‏.‏ قَالَ نَافِعٌ وَقَدْ أَرَانِي عَبْدُ اللَّهِ – رضى الله عنه الْمَكَانَ الَّذِي كَانَ يَعْتَكِفُ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْمَسْجِدِ ‏

"আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলূল্লাহ (সাঃ) রমাজান মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন। হাদিসের বর্ণনাকারী নাফি’ (রহঃ) বলেন, মাসজিদের যে স্থানে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ই‘তিকাফ করতেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা আমাকে দেখিয়েছেন।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৭১)

এছাড়াও আরও বহু হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমযানের শেষ দশকে এতেকাফ করার বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে।

রমজানের শেষ দশ দিনে বেশি বেশি ইবাদত করাঃ রমজানের শেষ দশ দিনে বেশি বেশি ইবাদত করার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)থেকে প্রমাণিত এবং অসংখ্য হাদীসে পাওয়া যায়।একটি হাদিসে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেনঃ

كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ‏.‏

"যখন রমজানের শেষ দশ দিন আসত তখন নবী (সাঃ) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।"

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০২৪ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-১৩৭৬,সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ১৬৩৯)

রমজান মাসের রোজা রাখার শর্ত। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রমজানে রোজার রাখার জন্য কিছু মৌলিক আচার আছে। যা ফরজ বলে চিহ্নিত। সুস্থ-সবল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। কিন্তু শারীরিক অসমর্থতার কারণে সে এ দায়িত্ব থেকে আপাতভাবে মুক্তি পেতে পারে। এর প্রতিবিধানে রয়েছে কাজা ও কাফফারার বিধান। নিচে রোজার ফরজ ও শর্তগুলো দেওয়া হলো-

রোজার ৩ ফরজ ঃ
  1. নিয়ত করা
  2. সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা
  3. যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।
রোজা রাখার ৪ শর্তঃ 
  1. মুসলিম হওয়া
  2. বালেগ হওয়া
  3. অক্ষম না হওয়া
  4. ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী। তাৎপর্য ও শিক্ষা

রোজা ভাঙ্গনের কারন ও করণীয়। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

  • যে সকল কাজ হতে বিরত থাকতে হয় রোজা অবস্থায়;
  • দেহগহ্বরের মধ্যে কোনো কিছু প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
  • যৌন ক্রিয়াকলাপে জড়ানো থেকে বিরত থাকা।
  • পরনিন্দার মতো অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা।
  • সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ।
  • উপবাস বা রোজার নিয়তের সহিত থাকা।
  • উপবাসের জন্য অনুমোদিত ব্যক্তিদের নৈকট্য থেকে বিরত থাকা।
যেসব কারণে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয় তা হচ্ছে;
  • মুসাফির অবস্থায়।
  • রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে।
  • মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
  • এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয়, যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতণীয়।
  • শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে।
  • কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে।
  • মহিলাদের মাসিক হায়েজ-নেফাসকালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়,যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়।

রমজানের রোজা রাখার উপকারীতা। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রমজানের একটি বিশেষ ফজিলত বা মাহাত্ম্য হচ্ছে,এই পবিত্র রমজান মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়,মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মুছে দেয় এবং আত্মাকে দহন করে ঈমানের শাখা প্রশাখা সঞ্জিবীত করে। সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এই মর্মে মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,

"রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।"

রোজার নৈতিক শিহ্মা ও তাৎপর্য। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ একদিকে আল্লাহর নির্দেশ পালন করেন,অপরদিকে তার নৈতিকতারও বিষেশ উন্নয়ন ঘটে।রোজার অনেকগুলো নৈতিক শিহ্মার মধ্যে কতিপয় শিহ্মা গুলো হচ্ছে; সংযম,সহমর্মিতা ও সহিষ্ণুতা।

সংযমঃমানুষের মধ্যে যেমন ভালো গুন থাকে,তেমনি তার মধ্যে জৈবিক ও পাশবিক শক্তিও থাকে।পাশবিক গুন মানুষকে স্বেচ্ছাচারিতার পথে পরিচালিত করে।স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সমাজে অনাচার,কোন্দল,কলহ ও অশান্তি ছড়িয়ে পরে।রোজা মানুষকে সংযম শিহ্মা দেয়। মানুষের কুপ্রবৃত্তি তাকে তার খেয়াল-খুশিমতো চলতে এবং সকল প্রকার অন্যায় কাজ করতে উদ্বদ্ধ করে। 


রমজানের রোজা অবাধ স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পানাহার ও অন্যান্য জৌবিক চাহিদা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকার শিক্ষা দেয়। রোজার চরম খাদ্যবিলাসী ও স্বেচ্ছাচারিতাকে সংযমী করে তোলে। পূর্ণ একমাস এই সংযম মেনে চলার প্রশিক্ষণ মানুষকে গোটা বছর সংযমী হয়ে চলতে সাহায্য করে।মাহে রমজান এলো বছর ঘুরে।

সহমর্মিতাঃ যে ব্যক্তি কখনো অনাহারে থাকে না, সে কিভাবে ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করেনি? আর যে কখনো রোগাক্রান্ত হয়নি, সে কিভাবে রোগা যন্ত্রণা অনুভব করবে? কোন অভুক্ত পিপাসার্ত ভিক্ষুক বিত্তশালীদের দ্বারে উপস্থিত হলে, যেন বিদ্রুপের শিকার না হয়- এটা রোজা অন্যতম শিক্ষা। রোজা থাকার মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মুসলিম ধনী-গরিব সকল মুমিন বান্দা সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হ্মুধার জালা বুঝতে পারেন।

গ্রীষ্মকালের দিন বড় হয়, আবহাওয়া প্রচন্ড গরম থাকে, তখন ধনী-গরীব উভয় পিপাসার কাতরতা সমভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। একইভাবে রোজাদার ব্যক্তির দ্বারে যখনই কোনো অনাহারী অভুক্ত মানুষ আসবে, তখন অবশ্যই তার মনে দয়া বা সহমর্মিতা সৃষ্টি হবে। ধনী বা গরীব এর মধ্যে আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা রোজা পালনের মাধ্যমে যতটা বৃদ্ধি পায়, তা অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে এত বেশি সৃষ্টি হয়না। 

এই উপলব্ধির বাস্তবতা পরীক্ষার জন্য রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একজন রোজাদার অপরকে ইফতার করানোর মানেই হচ্ছে সহমর্মিতা ও আন্তরিকতা বহিঃপ্রকাশ।পবিত্র মাহে রমজান।

সহিষ্ণুতাঃ সহিষ্ণুতা বা ধৈর্য মুমিনের জন্য এক বিশেষ গুন বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতিগতভাবে মানুষের অন্তর থাকে অস্থির ও চঞ্চল। যদি কোন দ্রব্য তার আওতার মধ্যে থাকে, তবে তা পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মনের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে নিজ ইচ্ছা মত কাজ করলে সমাজে বিশৃংখলার আশঙ্কা থাকে। একমাত্র সহিষ্ণুতা বা ধৈর্যের মাধ্যমে মনের কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 

দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার মাধ্যমে ধৈর্যের শিক্ষা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। রোজা পালনকারী দিনের বেলায় ক্ষমতা থাকা সত্যেও কিছু পানাহার করে না অন্যায় কাজ করে না এমনকি জৌবিক চাহিদাটুকুও দমন করে রাখে। এটি ধৈর্য দেখ অন্যতম দৃষ্টান্ত। 

কেউ যদি অভাব অনটনের কারণে আহারাদি সংগ্রহে অপারগ হয়, তবে রোজার মাধ্যমে অর্জিত ধৈর্য হতে পারে তার একমাত্র অবলম্বন। এতে একদিকে যেমন রক্ষা হয়নি মান তেমনি অপর দিকে শান্ত হয় পরিবার ও সমাজ। মাহে রমজান গজল।

শেষ কথাঃ রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব - রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও তাকওয়া লাভে ধন্য হয়।তাই আমরা রমজনের এই পবিত্র মাসে অতি আন্তরকিতার সাথে রোজা পালন করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url