গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা - গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসাব

অনেকে আছে যারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাই অথবা গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করতে চাই। কিন্তু তারা গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে সঠিক তথ্য বা কি কি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে অবগত নয়। তাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানাবো গ্রামীণ ব্যাংকের সকল সুযোগ-সুবিধা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে। গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা

ভূমিকাঃ গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা

গ্রামীণ ব্যাংক হলেও এক ধরনের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা একটি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা। যেটি ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাংকটি কোন মানব ছাড়াই দরিদ্র মানুষের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ বা গ্রামীণ ক্রেডিট প্রদান করে থাকে। অর্থাৎ এই ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অনেকটাই চিন্তিত। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক নিজের এমপ্লয়াদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই আমাদের এই পুরো পোস্ট জুড়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সকল সুযোগ সুবিধা এবং কার্য পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাস

১৯৭৬ সালে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এই সংস্থার ব্যাংকের প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তারপর ১৯৮৩ সাল থেকে এই ব্যাংকটি একটা বৈধ ও স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। গ্রামীণ ব্যাংকের একটি ঋণ প্রদানের সিস্টেম রয়েছে যেমন গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্র এবং দরিদ্র নারীদের পাঁচ জনের একটি দল গঠন করে এবং তাদেরকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে এবং এই ঋণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ প্রদানের হার এখন পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ।

গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা

গ্রামীণ ব্যাংক তাদের সদস্য এবং যারা সদস্য নয় তাদেরকেও অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা বা ঋণ দিয়ে থাকেন। নিচে সে সকল সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ-

মৌলিক ঋণ 

মৌলিক ঋণ হল গ্রামীণ ব্যাংকের এক ধরনের প্রাথমিক ঋণ যেটি গ্রামীণ ব্যাংক তাদের নতুন গ্রুপের সদস্যদের মূলধন হিসেবে দিয়ে থাকে। এই মূলধন টি হতে পারে ১০০০০ টাকা থেকে ৩০০০০ টাকা পর্যন্ত। এই দিনটি মূলত নির্ভর করে ঋণ গ্রহিতার পরিষদের ক্ষমতা এবং তার ব্যবসার ধারণা অনুযায়ী। ব্যালেন্স অনুযায়ী সুদের হার বার্ষিক ভাবে হয় ২০%। 

যদি আপনি এ ঋণটি নিতে চান তাহলে এক বছর মেয়াদী নিতে পারেন এবং প্রতি সপ্তাহের কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারেন। মৌলিক ঋণ, পশুসম্পদ,কৃষি, হস্তশিল্প, বাণিজ্য বা পরিষেবার মতো যেকোনো আয়বর্ধক কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট 

গ্রামীণ ব্যাংকে যে কোন সদস্য বা অসহযোগ্য উভয়েই গ্রামীণ ব্যাংকে মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে একটি সঞ্চয় একাউন্ট খুলতে পারেন। এই সঞ্চয় একাউন্টে সুদের হার 8% বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি ত্রৈমাসিক। একাউন্ট থেকে গ্রাহক বা সদস্য যখন ইচ্ছা তখন কোন জরিমানা বা আগাম কোন নোটিশ ছাড়াই নিজের টাকা সেভিংস একাউন্ট থেকে তুলতে পারবে। এই অ্যাকাউন্টটি মূলত ভবিষ্যতের অর্থ সঞ্চয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ফসল ঋণ 

এই তিনটি মূলত কৃষক ভাইদের জন্য প্রযোজ্য বেশি এবং এই ঋণটি মৌসুমী ফসলের জন্যই খালি প্রদান করা হয়। এই ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে ঋণ গ্রহণকারীর ফসলের ধরন ও তার চাহিদা অনুযায়ী। যার পরিমাণ হতে পারে ৫০০০ টাকা থেকে ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত । ব্যালেন্সের ভিত্তিতে এই ঋণের বার্ষিক সুদের হার হতে পারে বিশ শতাংশ(২০ %)। ফসল কেটে বিক্রি করার পর ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এই ঋণটিমূলত বীজ কীটনাশক সার ইত্যাদি জিনিস ক্রয় করার জন্য নেয়া হয়ে থাকে।

উচ্চ শিক্ষা ঋণ 

এই ঋণটি মূলত ১৯৭৭ সাল থেকে চালু হয় যার প্রধান লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার খরচ বহন করা। এই ঋণের মাধ্যমে সহজেই গ্রামীণ ব্যাংকের কোন সদস্যের সন্তান উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে। এই ঋণের পরিমাণ হতে পারে ৫০০০০ থেকে ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত।
 
যেটি নির্ভর করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জায়গা এবং কি কোর্স করছে সেটার অনুযায়ী। এই ঋণটির সুদের হার বছরে ৫%। কোর্স শেষ হওয়ার পর যদি শিক্ষার্থী চাকরি পায় তাহলে মাসিক কিস্তি অনুযায়ী এই দিনটি পরিশোধ করতে পারবে। এই দিনটি মূলত দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রী লাভের জন্য নেয়া হয়ে থাকে।

মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ঋণ 

যদি কোন সদস্য মৌলিক ঋণটি খুব দ্রুত সময়ে পরিশোধ করে থাকেন তাহলে তিনিও বড় ধরনের একটি ঋণ নিতে পারবেন, যাকে বলা হয় মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ঋণ। এই ঋণের পরিমাণ হয়ে থাকে ৩০০০০ থেকে ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত। এই ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় মূলত গ্রহীতার ব্যবসার ধরন এবং পরিশোধের ক্ষমতা অনুযায়ী। এই ঋণের ব্যালেন্সের অনুযায়ী বার্ষিক সুদ ২০%। 

আপনি চাইলে এক থেকে তিন বছরের মধ্যে সাপ্তাহিক কিস্তিতে এই ঋণটি পরিশোধ করতে পারেন। এই দিন মূলত গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা নিজেদের ব্যবসা আরও বড় বা নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য নিয়ে থাকে।

পশুসম্পদ ঋণ 

এই দিনটির মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা গবাদি পশু ক্রয় করতে পারে। এই ঋণের পরিমাণ হতে পারে ১০০০০ টাকা থেকে ৫০০০০ টাকা। মূলত এই ঋণটি নির্ভর করে গবাদি পশুর ধরন এবং সংখ্যার উপর। এই ঋণের ব্যালেন্সের অনুযায়ী বার্ষিক সুদ ২০%।আপনি চাইলে বার্ষিক মেয়াদে সাপ্তাহিক কিস্তিতে এই ঋণটি পরিশোধ করতে পারেন। এই দিনটি মূলত গবাদিপশু ক্রয়ের জন্যই নেয়া হয়ে থাকে।

সংগ্রামী সদস্য ঋণ

এই দিনটি মূলত ২০০২ সাল থেকে চালু হয়েছে যেটি দেয়া হয় ভিক্ষুক বা অত্যন্ত দরিদ্র মানুষদের। যারা বড় ধরনের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা রাখেনা তাদের মধ্যে এই ঋণটি দেয়া হয়।এই ঋণের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো এই ঋণের কোন সুদ দেওয়া লাগে না। 

গ্রামীণ ব্যাংকে যোগদান করতে ইচ্ছুক ভিক্ষুক এবংনিঃস্ব ব্যক্তিদের জন্য ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা এবং কিছু আয়বর্ধক কাজকর্ম যেমন ফুল বা গৃহস্থালী সামগ্রী, স্ন্যাকস, খেলনা বিক্রি করে তাদের জীবন কে আরো উন্নত করার চেষ্টা করে গ্রামীণ ব্যাংক। এই দিন পরিশোধের নির্দিষ্ট কোন সময় সীমা নাই তবে কেউ চাইলে সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারে।

গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসাব

বাংলাদেশের প্রতিটি চাকরি ক্ষেত্রে পেনশনের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা প্রক্রিয়া রয়েছে যার মাধ্যমে পেনশন প্রদান করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংকেও এমন একটা নিয়ম রয়েছে ।সেটি হলঃ-
পেনশন নির্ধারণের পদ্ধতিঃ সর্বশেষ বেতন গুন (x) সর্বমোট চাকুরির জন্য পেনশনের ধার্যকৃত হার (%) ÷ ২ = মোট পেনশন এর টাকা।

গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজারের বেতন কত

যে সকল কর্মচারী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম পর্বে প্রশিক্ষণ করবে তাদের মাসিক বেতন হবে সাত হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় পর্বের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারীরা ভাবে আট হাজার টাকা। এরপর প্রশিক্ষণ শেষে যে সকল কর্মচারী উত্তীর্ণ হয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার পদে যোগদান দিবে তারা গ্রামীণ ব্যাংকের ২০১৫ সালের নীতি অনুযায়ী বেতন পাবে ৯৭০০ থেকে ২৩ হাজার ৪৯০ টাকা পর্যন্ত। এর সাথে বোনাস ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। বোঝা যাচ্ছে যে গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজারদের বেতন মাশাল্লাহ অনেক ভালো।

গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার কত

গ্রামীণ ব্যাংকের সকল সুবিধার নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হলো


আমাদের শেষ কথাঃ গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা - গ্রামীণ ব্যাংকের পেনশন হিসাব

মূলত গ্রামীণ ব্যাংক তাদের কর্মচারী এবং ব্যাংকের সদস্যদের অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং লোন দিয়ে থাকে। যারা গ্রামীণ ব্যাংক গরীব দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন বীমা ও সুদবিহীন ঋণচালু করে রেখেছে। তাছাড়া এই ব্যাংকের কর্মচারীদের বেতন ও অনেক ভালো। আশা করা যায় আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি অনেক তথ্যবহুল ইনফরমেশন পেয়েছেন যেটা আপনার কাজে লাগবে। এরকম আরো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট রেগুলার ভিজিট করুন এবং এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url