সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজীলত

আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ড্রিম আইটিসির পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম।আজ আপনাদের কাছে আমরা সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজীলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো।


মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন জিনিস অথবা বিভিন্ন মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।মানুষ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহতালার সৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার মূল কারণ হচ্ছে নিজের ইচ্ছা বা প্রয়োজনের কথা আল্লাহতালার কাছে জানানো বিভিন্ন বিপদের হাত থেকে আল্লাহর কাছে রক্ষা চেয়ে প্রার্থনা করা।


সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজীলত

সূচিপত্রঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজীলত

সালাতুল হাজত কি?

"সালাত" অর্থ "নামাজ" তা আমরা সবাই জানি কিন্তু হাজত অর্থ কি? হাজতের অনেক গুলো অর্থ রয়েছে মুলত "হাজত" অর্থ হচ্ছে "ইচ্ছা" অথবা "প্রয়োজন"। অর্থাৎ সালাতুল হাজত অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা পুরন এর নামাজ যা কোন হালাল প্রয়োজনের জন্য নফল নামাজ আদায় করে।

সালাতুল হাজত নামাজ কেন পড়া হয়?

আমাদেরকে সকল প্রকার বিপদ-আপদ, রোগ-বালা, মুসিবতের হাত থেকে রক্ষা করার মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। বিপদে পড়লে বা কোন কিছুর প্রয়োজন বা ইচ্ছা পোষণ করতে চাইলে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় নেয়া উচিত। আল্লাহ তালায়ার আশ্রয় চাওয়ার একটিই মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। সালাতুল হাজত নামাজ কেন পড়া হয় ? এর একটি মাত্র উত্তর হচ্ছে আল্লাহর কাছে ইচ্ছা বা প্রয়োজনের কথা জানিয়ে দোয়া করা।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বান্দাকে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য কামনার নির্দেশ দিয়েছেন। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।' (সুরা বাকারাঃ ১৫৩)

এক হাদিসে আসেছে যে, নবী করিম (সাঃ) এর কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। অতঃপর কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তায়ালার নিকট স্বীয় প্রয়োজনের বা ইচ্ছা সমাধানের জন্য প্রার্থনা করতেন। এটাই ছিল নবীজির প্রয়োজন মিটানোর অনুপম আদর্শ। একইভাবে নবীজি (সাঃ) উম্মতকে নামাজ পড়ার মাধ্যমে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন।



তাই মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য হলো, যেকোনো বিপদের সম্মুখীন হলে প্রথমে দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক অথবা যেকোনো সমস্যাই হোক না কেনো,মুমিন সেই বিপদ থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে সালাতুল হাজতের পথ অবলম্বন করবে। লহ্ম্য করা যাবে সে বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তিটি কল্পনাহীন ও অদৃশ্যভাবে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে বিপদ মুক্ত হবে।

হাদিস শরিফে সালাতুল হাজতের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেমন, হজরত হুজাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সাঃ) এর অভ্যাস ছিল, যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন সামনে আসত, তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ : ১৩২১)

আরেকটি হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর নিকট অথবা কোনো মানুষের নিকট কোনো প্রয়োজন দেখা দেয় সে যেন উত্তমরূপে অজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেয়। তারপর সে যেন আল্লাহর প্রশংসা এবং নবী করিম (সাঃ) এর প্রতি দরুদ পাঠ করে।’ (তিরমিজিঃ ৪৮১)

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম কি ? সালাতুল হাজত নামাজ কত রাকাত

যদিও সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ের কোন অন্য আলাদা নিয়ম নেই স্বাভাবিক অন্যান্য নফল নামাজের মতই ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে সূরা-ফাতেহা এবং অন্যন্য সূরা মিলিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারবেন।

নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার হামদনাত ও সানা বা প্রশংসা এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি আয়াসাল্লাম এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করে আপনার মনের কথা বা আপনার প্রয়োজনের কথা আল্লাহর নিকট দোয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন।

সালাতুল হাজত নামজের নিয়ম হচ্ছে,ধরেন একজন ব্যাক্তির হালাল বা বৈধ ইচ্ছা (হাজত) হচ্ছে ৪টি,এবং এই ৪টি হালাল বা বৈধ ইচ্ছা গুলো পূরন হওয়ার জন্য প্রতি রাতে এশার নামাজের পর বা ঘুমানোর আগে ২ রাকাত করে সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করে এবং নামাজ শেষে উক্ত হালাল বা বৈধ ইচ্ছা পূরন দোয়া করা।

এই ভাবে যতদিন না আপনার ইচ্ছা বা হাজত পূরন না হবে ততদিন অবদি সালাতুল হাজত নামাজ ঘুমানোর আগে পড়তে পারেন। অন্য নিয়মও আছে সালাতুল হাজত নামাজের তবে উক্ত নিয়ম আপনি অনুসরন করতে পারেন।



তাছারা,আবদুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

''যে ব্যক্তির আল্লাহ তা"আলার কাছে অথবা কোন আদম সন্তানের কাছে কোন প্রয়োজন রয়েছে সে যেন প্রথমে উত্তমরূপে ওযু করে পবিত্র হয়, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করে, তারপর আল্লাহ তায়ালার আলার প্রশংসা করে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করে।'' (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৭৪৯)

সালাতুল হাজত নামাজ কোন সূরা পড়তে হয়? সালাতুল হাজত নামাজ এর সূরাসমূহ 

সালাতুল হাজত নামজ আদায় করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, যে কারনে অনেক সময় নামজের মধ্যে দোয়ার গননা অনেকে ভুলে জান। আমার নিজের অভিজ্ঞতার মতে আমি আপনাদেরকে সালাতুল হাজত নামজ এর কিছু ছোট সূরাসমূহ পরে নামাজ আদায় করার পরামর্শ দিতে পারি। 

তাছাড়া, অনেকেই এই বিপাকে পরেন যে কোন সূরা পাঠ করলে আপনার নামজ আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয় হবে। আসলে আল্লাহ মানুষের নেক অন্তন দেখেন, আল্লাহকে খুশি করার জন্য আল্লাহর হুকুম মেনে জীবন-যাপন করাটাই যথেষ্ট্য। আপনাকে আমরা নিচে কিছু ফজিলতপূর্ন কুরআনের কিছু ছোট সূরা লিখে দিচ্ছি যা আপনার নামজে পড়তে পারেন।

সালাতুল হাজত নামাজ এর সূরাসমূহ 

সূরা আল-কাউসার 

 •  إِنَّآ أَعۡطَيۡنَٰكَ ٱلۡكَوۡثَرَ
 •  فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ • إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ ٱلۡأَبۡتَرُ

সূরা ইখলাস 

 •قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ
 •ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ• لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ
• وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ

সূরা আল-কদর

• اِنَّاۤ اَنْزَلْنٰهُ فِىْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ
•  وَمَاۤ اَدْرٰٮكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِؕ
•  خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍؕ ۙ لَيْلَةُ الْقَدْرِ 
•  تَنَزَّلُ الْمَلٰٓٮِٕكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِاِذْنِ رَبِّهِمْ‌ۚ مِّنْ كُلِّ اَمْرٍ ۛ
 •  سَلَٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ  

সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়।সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই এটা আমরা আগেও জানিয়েছি কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে অন্যান্য নফল নামাজের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে,তবে সালাতুল হাজত নামাজ এর কি নির্দিষ্ট কোন সময় আছে? উত্তরটা এই ভাবে দেওয়া যাতে পারে যে,সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।

অনেক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনের বিভিন্ন বিপদ-আপদ অপ্রয়োজনীয়তা আল্লাহ তাআলার সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতেন।

তবে অনেকের মতে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার সবথেকে ভালো সময় হচ্ছে এশার নামাজের পর অথবা ঘুমোনোর আগে কিংবা তাহাজ্জুদের সময়। সালাতুল হাজত নামাজ নফল নামাজ নফল তাই এই নামাজ যেকোন ওয়াক্তে পড়তে পারেন।

সালতুল হাজত নামাজের নিয়ত। সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত আরবিতে

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা আরবি বলতে অথবা বুঝতে পারেন না,সেক্ষেত্রে আপনি আপনার নিজের ভাষা অর্থাৎ যে ভাষায় আপনি কথা বলেন অথবা আপনার বুঝতে সুবিধা হয় সেই ভাষাতেই আপনার প্রয়োজনীয় ইচ্ছার বিষয়টি উল্লেখ করে নিয়ত করতে পারেন। সালাতুল হাজত নামাজ হচ্ছে নফল নামাজ বা ইবাদত,তাই এই নামাজের নিয়তও নফল কথাটি উল্লেখ্য করতে হবে।

আরবীতে নিয়ত করার মূল কারণ হচ্ছে,আরবি হরফ বা অক্ষর পাঠ করলে প্রতিটি হরফে দশটি করে নেকি আপনার আমল নামায় যুক্ত হবে,বিশেষ করে কুরআনের আয়াত অথবা হাদিস পাঠ।

আরবীঃنوايد ون اصلي لله تعالى ركعتين صلاه الحاجه اصلي نفلي رسولله تعالا متوجيها الا جهه الكعبه الشريفة الله اكبر

উচ্চারণঃ"নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিহ-লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই সালাতুল হাজত সালাতি নফলি রাসূলিল্লাহি তা'য়াল মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।"


অর্থঃ"হে আল্লাহ! আমি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে একমাত্র আপনার সনতুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাতুল হাজতের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়িতেছি।"

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত ও সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি দেখুন

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া। সালাতুল হাজত নামাজের মোনাজাত

যে দোয়াগুলো পড়ে সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করতে হয়,সেই দোয়াকে সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া বলে।নিম্নে উক্ত দোয়াটি উল্লেখ্য করা হলো;

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়াঃ

ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ

অর্থাঃ"আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি ধৈর্যশীল ও মহামহিম। মহান আরশের মালিক আল্লাহ তা’আলা খুবই পবিত্র। সকল প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার জন্য। (হে আল্লাহ!) আমি তোমার নিকট তোমার রাহমাত লাভের উপায়সমূহ, তোমার ক্ষমা লাভের কঠিন ওয়াদা, প্রত্যেক ভাল কাজের ঐশ্বর্য এবং সকল খারাপ কাজ হতে নিরাপত্তা চাইছি।

হে মহা অনুগ্রহকারী! আমার প্রতিটি অপরাধ ক্ষমা কর, আমার প্রতিটি দুশ্চিন্তা দূর করে দাও এবং যে প্রয়োজন ও চাহিদা তোমার সন্তোষ লাভের কারণ হয় তা পরিপূর্ণ করে দাও।"

উচ্চারণঃ'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আসআলুকা মুঝিবাতি রাহমাতিকা ও আযায়িমা মাগফিরাতিকা ওল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররি ওয়াস-সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদা’ লি জাম্বান ইল্লা গাফারাতহু ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাঝতাহু ওয়া লা হাঝাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা ক্বাদাইতাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।'

তাছারা,শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে তুলে ধরে উক্ত দোয়াটি পাঠ করবেন ।

اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-

উচ্চারণঃ(আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র)।


অর্থঃ হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন।

মহিলাদের সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম। সালাতুল হাজত নামাজ কত রাকাত

মহিলাদের সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার নিয়ম হচ্ছে,মহিলারা অন্যান্য নফল নামাজের মতনই সালাতুল হাজত নামাজ পড়বে। নফল নামাজ আমরা যেভাবে দু রাকাত দুই রাকাত করে পড়ি ঠিক সেভাবেই সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করতে হবে ।
  • সর্বপ্রথম ওজু করে পবিত্রতা অর্জন করার পর কেবলা মুখী হয়ে জায়নামাজে দাঁড়াবে।
  • "নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিহ-লিল্লাহি তা'আলা আরবা রাক'আতাই সালাতুল হাজত সালাতি নফলি রাসূলিল্লাহি তা'য়াল মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।"
  • উক্ত লিখিত নিয়তিটি নিজ ভাষায় অথবা আরবিতে পাঠ করতে হবে।
  • এরপর তাকবীরে তাহরীমা,ছানা-তাশাহুদ পাঠ করার পর সালাতুল হাজত নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে যে কোন সূরা মিলাতে হবে।
  • এরপর রুকু সিজদা করে একইভাবে বাকি দুরাকাত নামাজ পড়তে হবে।
  • সালাতুল হাজত নামাজের দ্বিতীয় রাকাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ এর পর সালাম ফিরানোর পূর্বে প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তির মাধ্যমে তুলে ধরে উক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হবে।
  • নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার তসবি পাঠ করতে হবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরুদ পাঠ করে এই- ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
  • দোয়াটি পাঠ করতে হবে।
  • মহিলাদের সালাতুল হাজত পড়ার নিয়ম টি ভালোভাবে একাগ্রতার সাথে প্রতিদিন এশার নামাজের পর অথবা ঘুমনোর আগে মহিলারা তাদের কোন হালাল বা জায়েয ইচ্ছা/প্রয়োজন/কোন বিপদের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করতে পারেন।

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত। সালাতুল হাজত নামাজের উপকারিতা

সালাতুল হাজত নামাজের বিষয়টি আসলে আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে,এই নামাজ আমরা কেন পড়বো বা এ নামাজের ফজিলত কি ?সুতরাং আজ আমরা আপনাদেরকে সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে অবগত করব।

উপরোক্ত ব্লকটি পড়ে আমরা জেনে গেছি যে,সালাতুল হাজত নামাজ কেন পড়া হয় এবং এর ফজিলত গুলো কি কি হতে পারে,সালাতুল হাজত নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কোন বিপদগ্রস্ত হলে বা প্রয়োজনের জন্য সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতেন,এবং তিনি তাঁর সাহাবাদেরকে তাদের বিপদ আপদ অথবা প্রয়োজনের কথা আল্লাহর নিকট জানার জন্য সালাতুল হাজত নামাজ পড়া যৌন উৎসাহ দিতেন।


এক হাদীসে এসেছে হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন যে,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় চলে আসতো তখন তিনি সাথে সাথে আল্লাহতালার দরবারে সালাতুল হাজতের নামাজ আদায় করে আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় বা সাহায্য কামনা করতেন।

অর্থাৎ সকল মুসলমান মুমিন ব্যক্তিদের শারীরিক, মানসিক,সামাজিক বা পারিবারিক যেকোনো ধরনের বিপদে পড়লে বা কোন প্রয়োজন পড়লে ধৈর্যের সাথে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং আল্লাহ তালার আশ্রয় চাওয়া উচিত। সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত হচ্ছে সকল প্রকার বিপদ থেকে আল্লাহতালা রক্ষা করেন কেননা,একমাত্র আল্লাহ তালায় আমাদেরকে সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন।


আল্লাহতালা আমাদের লালন-পালন করেন আমাদের রিজিকের মালিক তিনি এবং আমাদের প্রত্যেকটি প্রয়োজন একমাত্র তিনিই পূরণ করতে পারেন।মানুষের জীবনে চলার পথে প্রত্যেকটি ধাপে বিপদ রয়েছে সে থেকে রক্ষার জন্য নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চাওয়া আমাদের করণীয়।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত ও সঠিক সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

সালাতুল হাজত নামাজ কি?

সালাতুল হাজত হল ইসলামে একটি বিশেষ প্রার্থনা, যা "প্রয়োজনের প্রার্থনা" নামেও পরিচিত, যেটি নিজের ইচ্ছা পূরণে বা নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহর সাহায্য চাইতে হয়।

আমি কখন সালাতুল হাজত আদায় করব?

সালাতুল হাজত যে কোনো সময় করা যেতে পারে, তবে বিশেষভাবে রাতের বেলায় আদায় করা বাঞ্ছনীয়।

সালাতুল হাজতে কয় রাকাত?

সালাতুল হাজত হল দুই রাকাত সালাত, যা ইসলামের অন্যান্য নিয়মিত নামাজের মতোই করা হয়।

সালাতুল হাজত আদায়ের কোন সুনির্দিষ্ট উপায় আছে কি?

হ্যাঁ, সালাতুল হাজতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নামাজের সময় কুরআন থেকে নির্দিষ্ট দুআ এবং সূরা পাঠ করা।

সালাতুল হাজত এককভাবে বা দলগতভাবে আদায় করা যাবে কি?

সালাতুল হাজতের ব্যক্তিগত ও দলগত উভয় অনুষ্ঠানই ইসলামে গ্রহণযোগ্য।

সালাতুল হাজত কতবার আদায় করতে হবে এমন কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা আছে কি?

সালাতুল হাজত কতবার আদায় করতে হবে এমন কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, তবে কারো প্রয়োজন পূরণ বা নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য যতবার প্রয়োজন ততবার করা যেতে পারে।

সালাতুল হাজত কি আমার আকাঙ্ক্ষা পূরণের গ্যারান্টি দেয় নাকি আমার সমস্যার সমাধান?

সালাতুল হাজত হল এক প্রকার ইবাদত এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, কিন্তু কারো ইচ্ছা পূরণ করা বা তাদের সমস্যার সমাধান করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আল্লাহর।

শেষকথাঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও ফজীলত

আপনাদের সুবিধার্থে সালাতুল হাজত নামাজ এর নিয়ম,সালাতুল হাজতের সঠিক সময়, সালাতুল হাজত কেন পড়া হয়,মহিলাদের সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম এবং সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

আশা করছি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সালাতুল হাজত নামাজ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান পেয়েছেন। আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সকল মুসলমান ভাই বোনদের কে সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের ইবাদতগুলো কবুল করেন এটাই কামনা করি।😊

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url