দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির উপায় - ইসলাম কি বলে

আমাদের আজকের আর্টিকেলের বিষয় হচ্ছে দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদাপদ থেকে মুক্তির উপায়।তাছাড়া আপনার জানতে পারবেন যে,দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন  কি ও কেন হয়?দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের লহ্মন কি,দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের ঔষধ,কিভাবে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায়, কেন মানুষ দুশ্চিন্তা-ডিপ্রেশনে পড়েন এবং কঠিন বিপদাপদ থেকে মুক্তির দোয়া-কোন সূরা পড়লে টেনশন দূর হয়,দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন যেকোন বয়সের মানুষের মধ্যে লহ্ম করা যায়,তাই এই বিষয়ে সঠিক ধারনা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ন।

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের লহ্মন কি,দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের ঔষধ,কিভাবে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায়, কেন মানুষ দুশ্চিন্তা-ডিপ্রেশনে পড়েন

সূচিপত্রঃ দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির উপায় - ইসলাম কি বলে

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কি ও কেন হয়? 

আজকের সমাজ অর্থাৎ তরুণ সমাজের মধ্যে সবথেকে বেশি প্রচলিত যে শব্দটি প্রায় প্রত্যেক তরুনদের মুখে শোনা যায় তা হচ্ছে ডিপ্রেশন।ডিপ্রেশন অর্থ অবসাদ বা দুশ্চিন্তা।কোন কিছু ভাল না লাগা সবকিছুতেই অবসাদ পাওয়া অথবা কোন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অধিক চিন্তা করাই হচ্ছে ডিপ্রেশনের লক্ষণ।দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কি ও কেন হয়? বলতে,ডিপ্রেশন এখন একটি সামাজিক রোগ হয়ে গেছে।অল্পতেই এখনকার তরুণরা হতাশ হয়ে পড়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে।ডিপ্রেশন হচ্ছে একটি অনিয়ন্ত্রিত মানসিক স্থিতি যার প্রধান কারণ হচ্ছে কোন কিছুর প্রতি অবসাদ,হতাশা বা ভয়।

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের লহ্মন কি?

যদিও আমরা জানি যে,কেন আমরা ডিপ্রেসড বা চিন্তিত হচ্ছি।তার পরও অনেকেই ভাবতে পারেন তারা যে কারনে দুশ্চিন্তা করছে তা হয়তো স্বাভাবিক।কিন্তু দুশ্চিন্তা কখনই একজন সুস্থ্য ব্যাক্তির জন্য  স্বাভাবিক কোন বিষয় হতে পারেনা।আপনার যদি বুঝতে কোন প্রকার সমস্যআ হয় যে আপনার দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক কিনা তাহলে আপনি নিচের দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের  লহ্মন গুলো নিজের সাথে মিলছে কিনা তা যাচাই করুন। 

দুশ্চিন্তার লহ্মনঃ

1. খাবারের প্রতি বিষাদ,রুচি কমে যাওয়া অথবা বেড়ে যাওয়া।হঠাৎ স্পন্দন দ্রুত বৃদ্ধি হওয়া যেকোনো কাজেই ভয় পাওয়া।এটি দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের লহ্মন
2. যেকোন কারণে খুবই চিন্তিত হয়ে পরা।
3. শরীরের প্রত্যেক মাংশ পেশিতে অসম্ভব ব্যথা অনুভব হওয়া।
4. বিশ্রামের অভাব এবং কাজে মনোযোগ করতে অসুবিধা হওয়া।
5. আস্তে আস্তে স্মৃতিশক্তি হ্রাস হওয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়।
6. শারীরিকভাবে ক্লান্তি,ঘুমের ব্যাঘাত বা গভীর ঘুম না হওয়ার সমস্যা।

আরো পড়ুনঃ মস্তিষ্ক ভালো রাখার উপায় - মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির খাবার 

ডিপ্রেশনের লহ্মনঃ

1. যে কোনো কাজের হ্মেত্রে ইচ্ছা শক্তি অভাব।
2. শারীরিক শক্তি কমে যাওয়া ও মাথা ব্যাথা।
3. অযথা কোন কারন ছারাই দুঃখ প্রকাশ করা অথবা মন মরা হয়ে থাকা।
4. নিজেকে সব কিছুর জন্য দোষী মনে করা।
5. নিজেকে একা মনে করা ও একা কল্পনা করা।
6.নিজেকে আঘাত করা বা আত্মহত্যা সম্পর্কে চিন্তা করা।এটি দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের লহ্মন
7. মাদক বা অন্য কোন নেশার প্রতি নিয়ন্ত্রিতভাবে আসক্ত হওয়া।

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের ঔষধ ও চিকিৎসা। দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানোর উপায়। হতাশা থেকে মুক্তির উপায় ইসলাম

আপনার দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য আপনি একজন ভালো ও অভিজ্ঞ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের বিষয়টিকে মোটেও হালকা ভাবে নিয়া যাবে না।দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্তপুর্ন অংশ মস্তিস্ক সাথে জরিত যা আমাদের পুরো শরীরকে নিয়ন্ত্রন করে এবং দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের আমাদের হৃদয়কেও প্রভাবিত করে।দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানোর উপায় সম্পর্কে আমরা যেসকল কাজ অথবা অভাস গড়ে তুলতে পারি সেগুলো হলো;

১।সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য

ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডঃওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার।যেমন;আখরোট, আলমন্ড, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, ইত্যাদি।ওমেগাযুক্ত বা ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার আমাদের মস্তিস্কের স্নায়ুগুলোকে সঠিক রেখে মস্তিস্কের ডুপ্রেশন যে প্রজ্বলন ও সেলুলারের হ্মতি হয় তা কমিয়ে আনতে সাহাজ্য করে।  

 
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃঅ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য যেমন;কুমড়ো, গাজর, ব্রকলি, পালংশাক, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেবু এবং আঙ্গুর ইত্যাদি।এই খাবার গুলোতে খুব সহজেই প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকে।যা ডিপ্রেসনের ফলে মানব শরীরে দিগুন ফ্রী রাদিক্যালস সৃষ্ঠী হয় যার ফলে মস্তিক ও শরীরের বিভিন্ন ভাগে সেলুলার নষ্ট হতে শুরু করে যা খুবই ক্ষতি কারক।দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের ঔষধ ও চিকিৎসা তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য এই হ্মতির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

প্রোটিন ও ভিটামিনঃপ্রোটিন যুক্ত খাদ্য হল দুধ, মাছ, মাংস, ডিম,সকল প্রকার ডাল, সোয়াবিন ইত্যাদি।এর মধ্যে থাকে এক প্রকার অ্যামাইনো এসিড যার নাম  tryptophan, এটি সেরেটোনিন বৃদ্ধি করতে সাহায্য এবং শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করে। যা আমাদের শারিরীক ও মানসিক  বিকাশে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে।এবং ভিটামিন যুক্ত খাদ্য,যেমন;বিভিন্ন প্রকার সবুজ-সতেজ শাকসবজি যাতে রয়েছে অধিক পরিমানে ভিটামিন,অ্যান্টি-ক্যান্সারের গুনাগুন,শক্তিশালী ইমিউনিটি বুস্টকারি উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইবার।যা দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের ঔষধ ও চিকিৎসা তে মস্তিস্কের সেলুলার ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে এবংমানসিক ও শারীরিক সুস্থ্যতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 

২। Neuro linguistic program সংহ্মেপে (NLP)

Neuro linguistic program হচ্ছে এমন এক ধরনের বিষেশ নিউরো থেরেপি যা মানব মস্তিস্কের আচারনের ধরন সম্পুর্ণভাবে পরিবর্তন করতে সহ্মম।অতিতের স্মৃতি একেবারে মুছে ফেলা অথবা মনের মধ্যে নতুন চিন্তা-ধারনা তৈরি করা সম্ভব Neuro থেরেপির (NLP) মাধ্যমে।দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের ঔষধ ও চিকিৎসা তে প্রতিদিন কিছু বিশেষ টেকনিকের সাহায্যে থেরেপিস্টরা দুশ্চিন্তা- ডিপ্রেশনের মত সমস্যার দ্রুত সমাধান করে থাকে।তা ছাড়াও নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল সুষ্ঠ ভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম এবং সহজে বিষন্নতা,দুশ্চিন্তা বা হতাশা কে চিরকালের মত দূর করতে সহ্মম এই থেরেপি।

তবে এই নিউরো থেরেপির টেকনিক শুধু মাত্র NLP  এক্সপার্টদের পরামর্শ নিয়ে করা সবচেয়ে ভালো মাধ্যম,যা দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনের ঔষধ ও চিকিৎসা ভুল NLP টেকনিক বা থেরেপি আপনার জীবনে আরো বেশি বিপদজনক হতে পারে।

৩। বাইনোরাল বিট'স  Binaural Beats 

ভালো মানের মিউজিক ফ্রিকোয়েন্সি (Music friqunce)আমাদের ঘুমের সমস্যা দূর করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতেও বেশ সহ্মম।(Binaural Beats) বাইনোরাল বিট'স হচ্ছে এমন এক ধরনের মিউজিক ফ্রিকোয়েন্সি যা মানব মস্তিস্কের মধ্যে আলফা,বিটা ও গামার রশ্মির মতো বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার হ্মমতা রাখে। মিউজিক ফ্রিকোয়েন্সি আমাদের মস্তিস্কের ওই সকল স্নায়ু যা আমাদের আবেগি চিন্তা-ভাবনা ও চেতনা তৈরি করে তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে  দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমিয়ে আনতে অনেকাংশে সহ্মম।

৪।লাফিং থেরাপি

Laughing therapy,আমরা সবাই জানি যে Laughing অর্থ হাসি।এখন অনেকেই ভাবতে পারেন যে, হাসি কিভাবে চিকিৎসা হতে পারে?আসলে মনোবিজ্ঞানিরা বিষেশ কিছু পরীহ্মার মাধ্যমে প্রমান পেয়েছেন যে,আমাদের হাসি শরীরে ইউনিটি বৃদ্ধি করতে সহ্মম ও আমাদের হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা অনেকটা কমায়,ভয় বা উদ্বেগ থেকে দূরে থাকতে সাহায়তা করার পাশাপাশি কিভাবে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায় তা নিন্ত্রন করে।আপনি যত বেশি হাসি-খুশি থাকবেন,ততই সুস্থ্য থাকবেন।এই জন্যই হাসিকে সমস্ত রোগের ঔষধ বলা হয়।

কিভাবে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায়?- ১০টি উপায়।দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়। চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

আপনাদের জন্য কিভাবে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায় তা সম্পর্কে আলোচনা করাই হচ্ছে আজকে আমাদের আর্টিকেলটির মুল উদ্দেশ্য।তবে চলুন আজকে আপনাদের কিছু উপায় জানানো যাক যে,কিভাবে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায়।দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কি ও কেন হয় এর আসল কারনই হচ্ছে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব।আপনি কিভাবে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায় তা নিচের বিষয় গুলো সম্পর্কে আজ জানতে পারবেন এবং আপনি নিজে বা আপনার আপন জনদের এই বিষয়ে জানাতে পারবেন।

যিকির

আল্লাহ তায়ালার যিকির এর মতো কার্যকর আর অন্য কোনকিছু নেই দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো বা দূর করার জন্য।তাই বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার যিকির পাঠের মাধ্যমে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায়। 

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানোর বিষয়ে কুরআনে-কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

"যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; ‘জেনে রাখ! আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও শান্তি আসে।" {সুরা রাদঃআয়াত ২৮}


হজরত (রা) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা দুশ্চিন্তা-অস্থিরতায় পতিত হতেন তখন বলতেন-

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ

উচ্চারণঃ ইয়া- হাইয়ু ইয়া- ক্বাইয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ।

অর্থঃ "হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই।"[তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম, মিশকাত]

لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ

উচ্চারণ : "লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।"

অর্থঃ" হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।" [তিরমিজি]

নামাজ

নামজ হলো সকল বিপদ হতে আল্লাহ তায়ালার নিকট রহ্মা চাওয়ার একটি মাধ্যম।আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য পেতে হলে সালাত বা নামাজ আদায় করতে হবে।এবং ৫ ওয়াক্ত নামাজের আল্লাহর কাছে দোয়া কামনা করে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন কমানো যায়।

মন ভালো রাখার চেষ্টা করা

আপনি যে দুশ্চিন্তাই বা ডিপ্রেশনে আছেন বলে সবসময় মনমরা হয়ে থাকবেন তা কিন্তু মোটেও উচিত নয়।সব সময় নিজের মস্তিষ্কে কে বুঝাতে হবে যে আমি ভালো থাকছি অথবা এমন কিছু কাজের সাথে যুক্ত হতে হবে আপনাকে যাতে আপনি কিছুটা সময় হলেও প্রশান্তি পান।অর্থাৎ ওই সকল কাজে মনোযোগী হন যা আপনাকে খুশী করে।কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে হারাম কোন জিনিস যাতে আপনার মন ভালো করার কারন না হয়।

তাওয়াক্কুল করা

মানসিক অশান্তি,দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আল্লাহতালার প্রতি তাওয়াক্কুল এর কোন বিকল্প নেই।কেননা তিনি সর্বশক্তিমান এবং সকল বিপদের রক্ষাকারী,আল্লাহ তাআলা বলেছেন-"যে আমার প্রতি তাওয়াক্কুল বা বিশ্বাস করে তার জন্য আমি(আল্লাহ) যথেষ্ট।"
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বর্ণনা করেন-"আলো জ্বালা ঘোষণা দেন,আমি সেই রূপ,যেরূপ আমার প্রতি বান্দারা ধারনা রাখে।"(বুখারি)
যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা বিশ্বাস করে তার জন্য দুনিয়ার কোন অবস্থায় দুশ্চিন্তা জনক নয়।

তাওবা-ইস্তেগফার

অনেক সময় আমাদের কৃত কাজের জন্যই আমার বিপদে অথবা দুশ্চিন্তায় পড়ি।

আল্লাহ তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন যে,"তারপর বলছি;তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন।তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন,তোমাদের জন্য জান্নাতে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদী নালা প্রবাহিত করবেন।"(সূরা নূহঃ আয়াত ১০-১২)


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন যে,"যে ব্যক্তি নিয়মিত তওবা-ইস্তেগফার করবে,আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট দূর করে দেবেন।সমাধানের পথ বের করে দিবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।"(আবু দাউদ)
তাই বিপদাপদে আপতিত হলে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবা- ইস্তেগফার করে ক্ষমা চাওয়া।

দরুদ পাঠ

আল্লাহতালার কাছে পৌঁছানোর প্রথম মাধ্যম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ।যে কোন দোয়া আল্লাহর কাছে চাওয়ার আগে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর প্রতি দরুদ পাঠ না করে দোয়া করলে সে দোয়া কখনোই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না।তাই যেকোন দোয়া ও আল্লাহর কাছে কোন বিপদ-আপদ বা দুশ্চিন্তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বেশী বেশী দরুদ পাঠ করতে হবে।

দান-সদকাহ

আপনার দান-সদকা আপনার বিপদ হতে আপনাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় দান সদকা।কেননা দান-সদকা আপনার বিপদ আপদ কাটিয়ে দেয়।দান সদকার মাধ্যমে আল্লাহতালা আপনার জন্য বিভিন্ন নিয়ামত প্রেরণ করেন।আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে রক্ষা।তাই বেশি বেশি দান-সদকা করা আপনার জন্য কল্যাণকর হতে পারে।

মেডিটেশন বা ধ্যান

মেডিটেশন বা ধ্যান,এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা আপনার মস্তিষ্ককে অনেকটা প্রশান্তি দিয়ে থাকে।বিজ্ঞানীদের একটি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সবথেকে ভালো ওষুধ বা চিকিৎসা হচ্ছে প্রতিদিন সঠিক নিয়মে করে ধ্যান বা মেডিটেশন করার অভ্যাস করা।মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনার শারীরিক রক্তচাপের পাশাপাশি স্ট্রেস হরমোন গুলি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং অতিরিক্ত তাহলে আপনার মস্তিষ্ক কিছুটা প্রশান্তি পাবে।মেডিটেশন বা ধ্যান আমাদের মস্তিষ্কের অবসাদ-দুশ্চিন্তা সকল প্রকার সমস্যা সহজে কাটিয়ে তুলতে পারে।

ভ্রমণ করা

মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই।ভ্রমণ আমাদেরকে নতুন জিনিস শিখতে সাহায্য করে।বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।ভ্রমণের মাধ্যমে মানসিকভাবে কিছুটা প্রশান্তি পাওয়া যায়।মন খারাপ অথবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হলে,আমাদের উচিত ভালো কোথাও ঘুরতে যাওয়া।ভ্রমণের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক দুশ্চিন্তা থেকে কিছুটা দূরে থাকার চেষ্টা করতে পারে।

ভালো সঙ্গ

অনেক সময় আমরা আমাদের মনের কথা অন্য কারো কাছে প্রকাশ করতে পারি না যার কারণে আমরা মনে মনেই ভুগতে থাকি।নিজের কষ্টের কথা বা দুশ্চিন্তার কথা অন্যকে না বলার মাধ্যমে ডিপ্রেশন আরো বেড়ে যেতে পারে।এজন্য এমন সঙ্গী খোঁজা উচিত যারা আমাদের মনের কথা শুনবে এবং আমাদেরকে বুঝার চেষ্টা করবে।তারা আমাদের বন্ধুবান্ধব,আমাদের মা-বাবা অথবা ভাই-বোনও হতে পারে।

কঠিন বিপদাপদ থেকে মুক্তির দোয়া । কোন সূরা পড়লে টেনশন দূর হয়। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুশ্চিন্তা ও বিপদের সময় এ বিশেষ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন, তাহলো-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণঃ "আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।" [বুখারি, মুসলিম, মিশকাত]


অর্থঃ" হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।"
 
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ 

উচ্চারণঃ"লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানকা ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন।"

অর্থঃ"আপনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আপনি মহা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অত্যাচারিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম"

اَللًٰهُمَّ إنِّيٍ أعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوْءِ الْقَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الْأَعْدَاءِ

উচ্চারণঃ"আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন জাহদিল বালায়ী ওয়া দারাকিশ শাক্বায়ী ওয়া ছূয়িল ওয়া শামাতাতিল আ'দা।"

অর্থঃ" হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কঠিন বিপদ, দুর্ভাগ্য পতিত হওয়া, ভাগ্যের অশুভ পরিণতি এবং শত্রু আনন্দিত হওয়া থেকে।"

দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির উপায় - ইসলাম কি বলে

কোন সূরা পড়লে টেনশন দূর হয়। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির হাদিস

কুরআনে কারীমে এমন কোন প্রশ্ন নেই যার উত্তর পাওয়া যায় না।আল্লাহতালা আমাদের জন্য কুরআন কারীমে সকল প্রশ্নের ও বিপদ আপদ থেকে রক্ষার উপায় বলে দিয়েছেন।কোন সূরা পড়লে টেনশন দূর হয় তা হচ্ছে,কুরআনে কারীমের প্রত্যেকটি সুরাই মানব সমাজের জন্য কল্যাণকর।এদের মধ্যে কিছু সূরা আছে যা আমাদেরকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ,দ্শ্চিন্তা অথবা ডিপ্রেশন এর হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।সবথেকে কার্যকরী সূরা হচ্ছে সূরা ইয়াসিন।সূরা ইয়াসিন পাঠের ফজিলত অনেক বেশি।তাই মানুষ যখন কোন বিপদ-আপদ পতিত হয় তখন সুরা ইয়াসিন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাকে সে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে।

শেষকথাঃ  দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির উপায় - ইসলাম কি বলে

আমাদেরকে এ কথা সব সময় মনে রাখা উচিত যে,জীবনে যে কোনো সময় যে কোনো মুহূর্তে সম্মুখীন হতে হবে।ভালো খারাপ বিপদাপদ যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে।কিন্তু এই সকল পরিস্থিতিতেই একমাত্র আল্লাহ তাআলার তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে মনের মধ্যে।কেননা একমাত্র আল্লাহ তালায় পারেন এ সকল বিপদ আপদের এবং দুশ্চিন্তার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে।তাছাড়া আমাদেরকে মনোবল শক্ত করতে হবে এবং যেকোনো পরিস্থিতি হোক না কেন তার মোকাবেলা করতে হবে।অল্পতেই ভেঙে পড়লে চলবে না নিজের মস্তিষ্ক এবং মনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।😊 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url